শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন [gtranslate]
Headline
Wellcome to our website...dd
৯৫ লাখ টাকা আদায় করতে ভায়রাকে অপহরণ, গ্রেপ্তার ৭
/ ৬০ Time View
Update : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি:

দীর্ঘদিন অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার ব্যবসায় সহযোগিতা করার কারণে খোকন হাজির সঙ্গে মোস্তফা হাওলাদারের সম্পর্ক হয়। ২০১৭ সালে ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী খোকন হাজিকে বিশেষ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও পিতলের ধাতব মুদ্রা ক্রয়ের প্রস্তাব দেন।

যার বিনিময় মূল্য ৪০০ কোটি টাকা। খোকন হাজির বিশ্বস্ত মোস্তফা হাওলাদার দুষ্প্রাপ্য মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা প্রদানের কথা বলে ঝালকাঠিতে নকল মূর্তি ও একটি প্লাস্টিকের বাক্সে নকল ধাতব মুদ্রা প্রদান করে খোকন হাজির কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

নকল মূর্তি ও নকল মুদ্রা পেয়ে খোকন হাজি অত্যন্ত ক্ষিপ্র হয়ে যান। মোস্তফা হাওলাদারকে পাগলের মতো ঝালকাঠির বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় খুঁজতে থাকেন।

কিন্তু নিরুদ্দেশ মোস্তফা হাওলাদারের কোনো সন্ধান সে পায় না। মোস্তফা হাওলাদার সম্পর্কে ভুক্তভোগী আনোয়ারের ভায়রা।

৯৫ লাখ টাকা আদায় করতেই ভুক্তভোগী হোসেন খান (৪৪) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকা থেকে অপহরণ করে অপহরণ চক্র। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের হোতা খোকন হাজিসহ (৬৫) মোট সাতজনকে গ্রেপ্তারসহ অপহৃতকে উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে অভিযান ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন-মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের হোতা হাজি ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০), ও মো. স্বাধীন (৫২)। অপহৃতকে আসামিদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে রিভলবার, ৮ রাউন্ড রিভলবারের গুলি ও শটগান জব্দ করা হয়।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত ১ মে রাত ৮টার দিকে ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজির নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র আনোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজির মালিকানাধীন ‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’ অফিসের ভেতরে আটকে রাখে। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা অপহৃতকে লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে মোবাইলে তার পরিবারের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৯৫ লাখ টাকা দাবি করে। অপহৃতের ছোট ভাই তার ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে অপহরণকারী চক্রের দেওয়া একটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে পাঠায়। ওই টাকা প্রদানের পরও অপহরণকারীরা অপহৃতের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে এবং তার পরিবারকে বাকি টাকা প্রদানের জন্য হুমকি দিতে থাকে। বাকি টাকা না দিলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় ওই অপহরণকারী চক্র ও অপহৃতের অবস্থান শনাক্ত করে। অপহৃতকে উদ্ধার এবং অপহরণকারী চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষে রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অফিসের ভেতরে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের ৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজি ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিলেন। তার এ দুষ্কর্মে সহযোগী ছিল ভারতীয় নাগরিক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতো। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। গ্রেপ্তার খোকন হাজি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মূদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিলেন। খোকন হাজির কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমূদ্রা সংগ্রহের কাজে নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার (৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করতো। বিনিময়ে তাদের মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দিতেন।

তিনি আরও জানান, গত ১ মে মোস্তফা হাওলাদার ও নাঈমের একজন সহযোগী মোবাইল ফোনে খোকন হাজিকে বলেন মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা আনোয়ার ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে এবং তাকে ধরতে পারলে মোস্তফা হাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এ প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার খোকন হাজি তার অপরাপর সহযোগী আরিফ হোসেন, মিলন, মোস্তাকিম, রুহুল, জাকির এবং স্বাধীনকে নিয়ে আনোয়ারকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার খোকন হাজির নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আনোয়ারকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি করে।

র‍্যাব-৩ এর সিও আরও জানান, খোকন হাজি একজন ঠিকাদার ও মতিঝিল এলাকায় তার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রেপ্তার খোকন হাজি ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। ঠিকাদারি ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মূদ্রার কারবার করে আসছিলেন। এ অপহরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তার অপরাপর সহযোগীরা সবাই তার অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের অন্যতম সহযোগী। অপহৃতকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page