সিনিয়র রিপোর্টার:
সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ২০১৫ সালের আগস্ট মাস থেকে ‘সুচনা- বাংলাদেশে অপুষ্টি চক্রের অবসান’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর নেতৃত্বে সাড়ে সাত বছর যাবত কর্মসূচী বাস্তবায়নের পর অন্যতম বৃহত্তম এই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রকল্পটি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হতে চলেছে। প্রকল্পের একটি সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় সোমবার ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ডাঃ নাহিদ রশিদ। তিনি বলেন, “শিশুর ভবিষ্যত ও নারীর ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ করলে আজীবন তার সুফল পাওয়া যায়। পূর্বে জাতীয় মৎস্য নীতিতে ‘পুষ্টি’ বিষয়ে কোনো উল্লেখ ছিল না, কিন্তু সুচনাকে ধন্যবাদ আমরা এখন নীতি সংশোধনে পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত করেছি। খর্বকায়তার অনেকগুলো কারণ মোকাবেলা করতে সুচনা কাজ করেছে এবং পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করতে আমাদের আরও সহযোগিতার প্রয়োজন, এবং এর জন্য বহু বিভাগের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার দারিদ্র্য বিমোচন এবং স্বাস্থ্য খাতে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী, যার জন্য সরকার, এনজিও ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ”।
সুচনা প্রকল্পটি ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (FCDO) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) দ্বারা অর্থায়িত। এই প্রকল্প ২৩৫,৫৭৯টি পরিবারকে লক্ষ্য করেছিল, যা সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার ২০টি উপজেলা এবং ১৫৭টি ইউনিয়নে বসবাসকারী ১৪ লক্ষ প্রকল্প অংশগ্রহণকারীর কাছে পৌঁছায়। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে ভালো কাজ/ অনুশীলনগুলোর প্রতিলিপি অব্যাহত রেখেছে সুচনা।
সুচনার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বকায়তার হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস করা এবং পুষ্টিহীনতা মোকাবেলায় সরকার এবং অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সমন্বিত, বহু-খাত ভিত্তিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা। প্রকল্পের ছয় বছরের মধ্যে, দরিদ্র এবং অতি দরিদ্র পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার, এনজিও এবং বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারিত্বে সমন্বিত পুষ্টি-নির্দিষ্ট এবং পুষ্টি-সংবেদনশীল কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে এটি অর্জন করা হয়েছিল।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সুচনা প্রকল্পের প্রধান অর্জন সম্পর্কে ড. শাহেদ রহমান, চিফ অফ পার্টি- সুচনা কথা বলেন, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় মৎস্য নীতিতে (পুনর্বিবেচনাধীন) ‘পুষ্টি’ অন্তর্ভুক্তকরণ; ৪১ লক্ষ বীজের প্যাকেটের মাধ্যমে পুষ্টি প্রচার; স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস (ডিআরআর) এর ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের বাজেট (ইউনিয়ন পরিষদ) বৃদ্ধি; জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (২০২৩-২০৫০) জলবায়ু স্মার্ট প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তকরণ; সরকার কর্তৃক কিশোর জীবন দক্ষতা, ফুলের চাষ ও হাঁস-মুরগির মডিউল ব্যবহার; এবং ৭৯,৬৭৪ জন দরিদ্র/অতি দরিদ্র উপকারভোগীকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
বাংলাদেশ সরকারের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করে সুচনা প্রকল্পটি সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ- এর নেতৃত্বে বিভিন্ন বিশেষায়িত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রদানকারী সাতটি কনসোর্টিয়াম সদস্য নিয়ে গঠিত: হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল (এইচকেআই), ওয়ার্ল্ডফিশ (ডাব্লুএফ), ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (আইডিই), ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশম (এফআইভিডিবি), সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস), রংপুর দিনাজপুর রুরাল সার্ভিসেস (আরডিআরএস), এবং প্রকল্পের গবেষণা অংশীদার আইসিডিডিআর,বি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এডউইন কোয়েককোয়েক, টিম লিডার, গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি, তিনি বলেন, “পুষ্টি একটি বহুমুখী সমস্যা, যার জন্য বহু অংশীদারের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপুষ্টি কমাতে বহু অংশীদারের প্রচেষ্টা প্রয়োজন এবং সুচনা নারী ও মেয়েদেরকে তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ে পুষ্টি চক্র উন্নত করতে ক্ষমতায়ন করেছে। খর্বকায়তা কমাতে একাধিক সেক্টরের সমন্বিত প্রচেষ্টা একত্রে কাজ করছে এখানে। সুচনা কার্যকর অংশীদারিত্বের একটি আদর্শ মডেল হয়ে থাকবে।”