অনুরূপ আইচ : করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। বাংলাদেশে এই করোনাতে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে আঘাত করেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমূহ।
দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। বেসরকারিভাবেও অনেকেই সরকারের এই কাজে সহযোগিতার হাত প্রসার করেছে। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে আরও বিপদে ফেলে গেল দেশকে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, করোনার ভিতরেও ঘরবাড়ি বানিয়ে দিয়ে ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত উপকূলীয় অঞ্চলের ভুক্তভোগীদেরকে দ্রুত পূনর্বাসনের ব্যাবস্থা করতে।
বাংলাদেশে যেকোনো মহামারী বা সংকটকালে গরীবেরা সহজে সাহায্য পান সরকারের তরফ থেকে। বেসরকারি সাহায্যও পান দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দেশের ধনী সম্প্রদায় গরীবদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে নানান ব্যাবসায়িক সুবিধা পান সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু বিপদের এই মহাসংকটে ডুবে থাকে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
শিক্ষার প্রভাবে ও মান সম্মানের ভয়ে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না। ত্রাণ চাইতে পারেন না। সর্বোচ্চ তারা ধার চাইতে পারেন নিকটজনের কাছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের বেশিরভাগ ঘনিষ্ঠজনই থাকে মধ্যবিত্ত। এক্ষেত্রে কে বা কাকে কত ধার-ই দিতে পারবেন মাসের পর মাস!
মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পরিচিত যারা ধনী ব্যাক্তি থাকেন, তাদের অনেকেই মনে করেন মধ্যবিত্ত পরিচিতদের চেয়ে অপরিচিত নিম্নবিত্তদের সাহায্য করলে পেপারে নাম উঠবে, টিভিতে চেহারা দেখাবে, সমাজে নাম ফুটবে কিংবা ইনকাম ট্যাক্স দেয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন। যাই হোক, ঘটনার আড়ালের এসব খবর সবাই টের পান বা জানেন-বুঝেন ঠিকই। শুধু দেশে প্রচলিত ডিজিটাল আইনের ভয়ে মুখে বা হাতের আংগুলের ডগায় ভয়ের আংটা আটকে রাখেন।
করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকার ভাড়াটিয়াদের অধিকাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি তুলেছিলেন সরকারের কাছে, যাতে তারা ভাড়া মওকুফ বা সহজ শর্তে ঋণের মাধ্যমে সংকট কাটাতে পারেন। কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তদের এই দাবি যেন ভাইরাল হলো না। মিডিয়ায় কাটতি জোগাবে না ভেবে হয়ত এ বিষয় নিয়ে অনেকটা নিশ্চুপ দেশের গণমাধ্যমগুলো। অথচ তারা আবার ভাবেন, উনারা সংবাদ পরিবেশন করে দেশের মানুষের সেবা করে উল্টিয়ে ফেলছেন। তাই গণমাধ্যমের অনেকের জন্যও সরকারের তরফ থেকে আর্থিক সুবিধাসহ আরও সুবিধার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
করোনার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এসে ঢাকা শহরের অনেক ভাড়াটিয়াদের গ্রামের বাড়ি তছনছ করে দিয়েছে। তাই ঢাকার পাশাপাশি খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহরের ভাড়াটিয়াদের অবস্থাও এখন করুণ।
ভাড়াটিয়াদেরকে সাহায্য করতে বাড়িওয়ালারা ব্যাক্তিগতভাবে ঘর ভাড়া মাফ করে দেবেন, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কিছু কিছু বাড়িওয়ালা স্বেচ্ছায় ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করার ঘটনা এদেশে ঘটেছে। তবে এই উদাহরণ সংখ্যায় অপ্রতুল। এ কথাও মনে রাখতে হবে, বাড়িওয়ালারা স্বেচ্ছায় ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করতে বাধ্য নন। এছাড়াও দেশে অনেক বাড়িওয়ালা আছেন যারা মাত্র একটা বা দুইটি ফ্ল্যাটের ভাড়া তুলে নিজের বড় পরিবার চালান বছরের পর বছর, সন্তানদের পড়ালেখা করান ও আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য করেন। ধরতে গেলে তারাও মধ্যবিত্তের কাতারের মানুষ।
দেশের ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালাদের সম্পর্ক সুন্দর রাখতে বা তাদেরকে নিরাপদে ঘরে বসবাসের জন্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। এই করোনার ভিতরেও বাড়িওয়ালাদের গ্যাস-কারেন্ট-পানির বিলসহ অন্যান্য বিল দেয়া থেকে রেহাইয়ের বা আপাতত বিল বাকি রাখার কোনো ঘোষণা আসেনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়াদেরকে সহজ শর্তে ২-৩% সুদে ব্যাংক লোন প্রদানেরও কোনো ঘোষণা নেই সরকারের তরফ থেকে। তবে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারের উচিৎ বাংলাদেশের বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের সুযোগ করে দেয়া। নইলে দেশের বৃহৎ এই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নষ্ট হয়ে যাবে হয়ত। আর যেদেশের শিক্ষিত শ্রেণির মানুষের বাঁচতে সমস্যা হয়, সেদেশকে কুশিক্ষা ও অধর্ম গ্রাস করবে সহজে।
সরকারের বোঝা উচিৎ, শুধু ধনী ও গরীব বাঁচিয়ে একটা দেশকে উন্নত দেশ বানানো যাবে না। তাই বলে গরীব বা ধনীদেরকেও খাটো করে দেখা যাবে না। গণতান্ত্রিক দেশে তো সবার সমঅধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এতেই মানবিক দেশ গড়ে উঠে।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ এদেশকে স্বাধীনতা এনে দেয়া বা তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বেশিরভাগ মানুষের পরিবার কিন্তু মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তদের কষ্ট কখনো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে স্ট্রাগল করতে করতে গণমানুষের কল্যাণ করার ফলেই আজকের অবস্থানে এসেছেন। তাই তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্যই যেন অপেক্ষায় রয়েছেন দেশের সকল বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ারা।