সিনিয়র রিপোর্টার:
আকস্মিক নীতিগত পরিবর্তন, ইকোনমিক জোন এবং হাইটেক পার্কে ১ ও ৫ শতাংশ কর নির্ধারণ এবং ইকোনমিক জোনের বাইরে কারখানা তৈরি করলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) বাধাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)।
গতকাল রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এবারের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২ শতাংশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
এফআইসিসিআই মনে করে, এ লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী হলেও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব। তবে এটি খুব চ্যালেঞ্জিং হবে।
অর্থ বিলে উপস্থাপিত কয়েকটি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে এফআইসিসিআই। তবে তারা টেলিকম, কার্বনেটেড বেভারেজ, ওয়াটার পিউরিফায়ারের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ও ট্যাক্স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রস্তুতকারকদের জন্য বর্ধিত এ কর ব্যবসার মুনাফা ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং সম্ভাব্য বিদেশী বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।
সংবাদ সম্মেলনে এফআইসিসিআই সরকারকে আর্থিক খাতের সংস্কারের ওপর নজর দেয়ার তাগিদ দিয়েছে।
অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ এফআইসিসিআই বাংলাদেশের নিম্ন রেভিনিউ-টু জিডিপি অনুপাত তুলে ধরে এর আরো উন্নতির আহ্বান জানিয়েছে।
গৃহস্থালি আয় সমীক্ষা অনুসারে, জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষ জাতীয় আয়ে ৪০ শতাংশ অবদান রাখে। কিন্তু এনবিআরের তথ্য অনুসারে দেশের মাত্র ১০ মিলিয়ন নিবন্ধিত করদাতা রয়েছে। তাই জনগণকে ট্যাক্স নেটের আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরো অনেক দূর যেতে হবে। যেহেতু সরকার এ নিয়ে কাজ করছে, সামনে ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করে এফআইসিসিআই।
এ ব্যাপারে সংগঠনটি সেক্টরভিত্তিক রাজস্ব বিশ্লেষণ এবং করদাতার ভিত্তি বাড়ানোর মতো উদ্ভাবনী পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এফআইসিসিআইর সভাপতি জানান, অর্থ বিল ২০২৪-এ চেম্বারের প্রস্তাবিত সংশোধনী গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। বিশেষ করে সম্ভাব্য করের হারের বিষয়টি, যা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছে। এ হার বজায় থাকলে ব্যবসাগুলোকে কার্যকরভাবে পরিকল্পনা করতে এবং বিনিয়োগ করতে সক্ষম করবে৷
এছাড়া এফআইসিসিআই শিল্পের কাঁচামালের জন্য উৎসে ট্যাক্স ডিডাকশন সহজ করার লক্ষ্যে তাদের প্রস্তাবকে গ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি মাসিক উইথহোল্ডিং ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়ার জন্য সময় বাড়ানোর বিষয়টি অর্থ বিল ২০২৪-এর মাধ্যমে গৃহীত হয়েছে বলে সাধুবাদ জানিয়েছে এফআইসিসিআই।
কর ব্যবস্থাকে সরল করার জন্য প্রস্তাবিত কর সংস্কারের প্রশংসা করেছে এফআইসিসিআই। কিন্তু উচ্চ কার্যকর করের হারকে শিল্পের জন্য মূল উদ্বেগের বিষয় বলেও অভিহিত করেছে। যদিও ব্যক্তিগত তহবিলের জন্য ১৫ শতাংশ আয়কর হারের প্রশংসা করেছে চেম্বার। তবে সরকারি তহবিলকে কর থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এফআইসিসিআই। বিষয়টি সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
এদিকে এফআইসিসিআই বলছে, ব্যক্তিগত আয়কর হার বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়মিত করদাতাদের কাছে অন্যায় মনে হতে পারে এবং অসাবধানতাবশত কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত করতে পারে। ট্যাক্স স্ল্যাবে এ ধরনের পরিবর্তনগুলো অনুগত করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে। এছাড়া এটি এনবিআরের বর্তমান প্রেডিক্টিভ ট্যাক্স কালচার নীতির বিরুদ্ধে রেট্রসপেক্টিভ হচ্ছে। তাই চেম্বার ২০২৪-২৫ আয়কর বর্ষে চলতি বছরের হার প্রযোজ্য রাখার সুপারিশ করেছে। এ নীতির ফলে আরো সঠিক ও দক্ষ কর ব্যবস্থা তৈরি করার লক্ষ্যে ট্যাক্স নেট প্রশস্ত করার সঙ্গে করের হার হ্রাস করবে। যা কমপ্লায়েন্সকে উৎসাহিত করে, করদাতা বাড়ায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায়, সুষ্ঠু কর বণ্টন নিশ্চিত করে এবং কর প্রশাসনকে সরল করে আরো স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য কর রাজস্বের দিকে নিয়ে যায়।
এনবিআর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা প্রস্তাবিত বাজেটের ৬০ শতাংশ। এফআইসিসিআই এ লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ট্যাক্স, ভ্যাট ও শুল্ক প্রশাসন স্বয়ংক্রিয় করা, কর সংগ্রহ সহজীকরণ ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ বা নির্দেশনার অভাব রয়েছে বলেও জানিয়েছে এফআইসিসিআই।