সিনিয়র রিপোর্টার:
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৯০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান অফ কাটার সেন্টার অ্যান্ডআউটসোর্সিং (বাক্কো)’। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ ছোট্ট সংগঠনটি কালের পরিক্রমা আজ দেশের তথ্য
অবদান রেখে চলা এক অন্যতম সংস্থা। বারো বিশ্বাস করে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোই তাদের পথচলার চালিকাশক্তি, এবং সকল প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং কার্মোদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভাবনাময় এ শিল্পখাতটির অবস্থান বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলা শিল্পখাতগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে উন্নীত করা সম্ভব, আর তার জন্য প্রয়োজন সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মেলবন তৈরি করা।তারই অভিপ্রায়ে, বারো বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও আয়োজন করেছে “মেঘার মि ২০২৪ ” শীর্ষক একটি প্রীতি সম্মিলনীঅনুষ্ঠান।
আজ রাজধানীর সেলিব্রিটি কনভেনশন হলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি ।
অনুষ্ঠানে সদস্যদের প্রীতি সম্মিলনীর পাশাপাশি বাক্কোর নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যদের আনুষ্ঠানিক অভিশেক ঘটে। ২০২৪-২৬ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হিসেবে ডিজিকন টেকনোলজিস পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ শরীফ
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফিফোটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহি হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে টাইমস এএসএল কল সেন্টার লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো: আবুল খায়ের, সহসভাপতি হিসেবে অটোমেশন সলিউশনজ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তানভীর ইব্রাহীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাই আউটসোর্সিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: তানজিরুল বাসার এবং অর্থ সম্পাদক হিসেবে ইম্পেল সার্ভিস অ্যান্ড সলিউশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ খান, স্কাইটেক সলিউশন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুসনাদ ই আহমেদ,নোবেল আইটি সলিউশন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুল হক, ভার্চুয়াল মার্কেট সলিউশন লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের,আয়েশা সার্ভিসেস লিমিটেডের (এএসএল বিপিও) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জায়েদ উদ্দীন আহমেদ এবং মনস্টারল্যাব এন্টারপ্রাইজ সলিউশন্স লিমিটেডের পরিচালক মেহেদী হাসান জুলফিকার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাকো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, বিপিও শিল্পের অভিলক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় অর্জন ও ১ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি । এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকল প্রতিবন্ধকতা হতে উত্তরণে আপনাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আশা করছি, ২০২৪ – ২০২৬ মেয়াদের এই নবনির্বাচিত কমিটি এই শিল্পের সম্প্রসারণে তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করি তাহলে অচিরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ করা সম্ভব ।
পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পখাতের উপরে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাকো সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন,“তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্তর্ভুক্ত শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও)’, যা ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে সেবা রপ্তানির মাধ্যমে বছরে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আহরণকারী নিয়ত-বর্ধনশীল এক শিল্পক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিপিও শিল্পে বর্তমানে কর্মরত জনসম্পদের সংখ্যা ৮০০০০*; যার ৪০ শতাংশই নারী। বাকো ২০২৫ সালের মধ্যে বিপিও শিল্পখাতে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় তৈরি ও ১ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের “স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১” -লক্ষ্য অর্জনে সরকারি,।
বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও অংশীজনদের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পূরণে নানামুখী কর্মসূচীও গ্রহণ করেছে বাক্কো”। তার পরপরই তিনি সদস্যদের সামনে নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ ও উপদেষ্টাপাপের পরিচিতি উপস্থাপন করেন। তিনি বাক্কোর পূর্ববর্তী কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়া বাক্কোর আটটি
উপ-কমিটির ডিরেক্টর ইনচার্জ প্রত্যেকে নিজ নিজ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে উপ-কমিটির অভিলক্ষ্য, কর্মপরিকল্পনা এবং গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে এ খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে বিশ্বমানের সক্ষমতা তৈরি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিশ্চিতকরণ, দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ প্রদান এবং স্থানীয় বাজার বড় করতে হবে। সেটা যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়। সে লক্ষ্যে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা রাখা প্রয়োজন। তাই এসব লক্ষ্য অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় আনতে অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছেন এবং আবারও করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, বাক্কো’র প্রায় ৪’শ কোম্পানিতে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা প্রত্যেকে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী এবং বাংলাদেশের সম্পদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প ঘোষণা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। প্রথমত, দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করা, দ্বিতীয়ত দেশের সকল মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া, তৃতীয়ত ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থার সেবাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং চতুর্থ আইসিটি শিল্প বিকাশ। এই চারটি জায়গাতেই বাক্কো’র প্রত্যেকটা উদ্যোক্তা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন।
পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বিগত ১৫ বছরের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আগামী ১৭ বছরে বাক্কো’র যারা মেম্বার এবং উদ্যোক্তা তারাই নতুন নতুন সেক্টরে সক্ষমতা তৈরি করবে। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ২০০টি দেশ রয়েছে। সে সকল দেশে আমাদের ব্যবসা করার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশকে ধরলে হবে না, সারা বিশ্বটাকে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে বাক্কো’র প্রতিটি উদ্যোক্তাকে সাহসিকতার সাথে নতুন নতুন জায়গায় তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে অভিনন্দন জানান । বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অচিরেই হয়ে উঠতে চলেছে এক অন্যতম বিপিও ডেস্টিনেশন, এরূপ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, এসপিপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন, “বাক্কোর নতুন কার্যনির্বাহী কমিটিকে অভিনন্দন।
বিপিও শিল্পের সম্প্রসারণে বিটিআরসি তার সর্বাত্মক সহযোগিতা অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, সবাই সবার নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করে গেলে প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ সরকারের “স্মার্ট বাংলাদেশ’ লক্ষ্যমাত্রা সফল করা সম্ভব”।
এছাড়াও, অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাক্কো আয়োজন করে সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভা। আলোচনায় বিপিও ইন্ডাস্ট্রি সম্প্রসারণের পথে বিদ্যমান সকল প্রতিবন্ধকতা হতে উত্তরণের উপায়, কর্মীসংস্থান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, প্রযুক্তির সংস্থায়ন,ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নানাবিধ সমস্যার সমাধানে করণীয় সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে বাক্কোর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোঃ আবুল খায়ের বাক্কোর সকল সদস্যবৃন্দ, এই অনুষ্ঠান আয়োজনে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এবং অনুষ্ঠান আয়োজনে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান ।
এরপরই অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয় বাক্কো। সাড়ম্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে প্লাটিনাম স্পন্সর পেওনিয়ার, নগদ, ওয়েজলি, গো-ইয়ারা লিমিটেড, আয়েশা সার্ভিসে সলিমিটেড (এএসএল বিপিও), এবং টাইমস এএসএল কল সেন্টার লিমিটেড; গোল্ড স্পন্সর ফিফোটেক, স্কাইটেক সলিউশন্স, মনস্টারল্যাব এন্টারপ্রাইজ সলিউশন্স লিমিটেড, ডিজিকন টেকনোলজিস পিএলসি, সিলভার স্পন্সর মাই আউটসোর্সিং লিমিটেড, আর্থ নেক্সট টেকনোলজিস লিমিটেড, মিতালি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যাপোলো গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি, এবং অটোমেশন সার্ভিসেস লিমিটেড।
সবশেষে, শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর সংগীতে পরিপূর্ণ এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের বাক্কো মেম্বারস মিট ২০২৪।