বিশেষ প্রতিনিধি:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন ‘নৌকার মাঝি’ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন। গতকাল রোববার এই আসনে উৎসব মুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে ভোটাররা কেন্দ্রে আসেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও সময় যতো গড়িয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতিও ততো বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি ৮৪০৫৩টি ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাতে তার এই বিজয় লাভের খবরে ঢাকা-১১ নির্বাচনী এলাকায় বিজয়ের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠেন দলীয় নেতাকর্মী, ভোটারসহ এলাকাবাসী। ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন এলাকার সর্বস্তরের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সারথী, ঢাকা মহানগর উত্তরের জননেতা মো. ওয়াকিল উদ্দিনকে এবারের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসনের জন্য প্রার্থী হিসেবে বেছে নেন দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয় তার প্রতি। দীর্ঘদিন গণসংযোগকালে ভোটারের দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন তিনি। একই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর ভালোবাসায় ভোটাররা শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে নৌকা মার্কায় ওয়াকিল উদ্দিনকে রায় দিয়েছেন গতকাল। এ আসনে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ছিলো না কোনো অভিযোগও। ভোট শেষে মোট ১৬২টি কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ৮৪০৫৩টি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী পেয়েছেন ২৭৩২টি ভোট। এছাড়া একতারা ১১৮১, ডাব ৪৪৭, আম ৪৭৭, মাছ ৩২২, টেলিভিশন ১৬৬, নোঙ্গর ১১১৭ ভোট। বাতিল হয়েছে ২০৫৫টি ভোট। মোট ভোট পড়েছে ৯২৫৫০।
অভূতপূর্ব এ জয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা-১১ আসনে জয়ী হয়ে এই আসনের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন, এখন আমি তাদের সেবা করবো। আমি ১৯৭১ সালে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি, এখন দেশ ও দশের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। সেটা কাজে লাগাবো।’
ওয়াকিল উদ্দিন বলেন, ‘সবার ভালোবাসা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। আমি নমিনেশন পাওয়ার পর থেকেই এই আসনের সাধারণ মানুষ আমার জন্য খেটেছেন। আমি তাদের ভালোবাসার কাছে ঋণী।’
তিনি বলেন, আমি আজ থেকেই আপনাদের সেবক বলে নিজেকে পরিচয় দিতে চাই। একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়াসহ সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে সর্বদা পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মো. ওয়াকিল উদ্দিন ১৯৫৪ সালের ২ জুলাই ঢাকা জেলার অভিজাত এলাকা বারিধারা (তৎকালীন কালাচাঁদপুর) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখায় হাতেখড়ি তাঁর। কিশোর বয়স থেকেই দেশামাতৃকার প্রতি অগাধ ভালোবাসা জন্ম নেয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মাঝে। সে সময় থেকেই মাটির মানুষ হয়ে জনগণের জন্য কিছু করার অভিপ্রায়েই মগ্ন ছিলেন তিনি। দেশপ্রেমে উজ্জ্বীবিত হয়ে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। প্রথমে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য, সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সদস্য, গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে গুলশান থানা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসেবেও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৬৯ সালের অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী কাজে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় হাতে লাঠি নিয়ে যোগ দেন তরুণ ওয়াকিল উদ্দিন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে অনুপ্রাণিত হয়ে অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭!
এতো অল্প বয়সেও যুদ্ধকালীন সময়ে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা পরবর্তীতেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেন তিনি। সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালান ওয়াকিল উদ্দিন।
পরবর্তীতে সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশ পুনঃগঠনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে প্রতিটি লড়াই সংগ্রাম ও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সনে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নেন ওয়াকিল উদ্দিন। যার ফলে তৎকালীন খুনি মোস্তাক ও জিয়া সরকারের প্রশাসনের রোষাণলে পড়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে হয় তাকে। শিকার হন অসংখ্য মামলা ও হামলার। তারপরও জনগণের সেবার রাজনীতি তিনি ছাড়েননি।
১৯৯৪ সালে তৎকালীন বৃহত্তর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকারের অধীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪-২০১৬ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
গণমানুষের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিন রাজনীতির পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি বারিধারা কর্পোরেশন লিমিটেড ও বারিধারা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান। এছাড়া দেশের সেরা আবাসন কোম্পানি স্বদেশ প্রোপার্টিস লিঃ -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়াও তিনি প্রায় ৫০টিরও অধিক সামাজিক, ধর্মীয় এবং শিক্ষামূলক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি বিশ্ব বৌদ্ধ শান্তি সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওয়াকিল উদ্দিনের বিজয়ে বিভিন্নমহল থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। এরমধ্যে দেশে আবাসন খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রপার্টিস পরিবার, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পরিবার পৃথক বার্তায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যকে অভিনন্দন জানান।