সিনিয়র রিপোর্টার:
রাজধানীর লালবাগে ট্রাফিক পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণকারী সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভ্যানচালককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কামরাঙ্গীচর থানা।
গ্রেফতারকৃতের নাম ইসমাইল হোসেন জীবন। সোমবার রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনা সংঘটনের কাজে ব্যবহৃত ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প ও তার ময়লা ফেলার ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো: জাফর হোসেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, লালবাগ বিভাগের ট্রাফিক কনস্টেবল মোঃ মতিয়ার রহমান গত বুধবার (২০ ডিসেম্বর) কামরাঙ্গীরচর থানার সেকশন বেড়িবাঁধ এলাকায় কর্তব্যরত ছিলেন। সেদিন দুপুরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা টানার একজন ভ্যানচালক উল্টো পথে যেথে চাইলে কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল মতিয়ার তাকে বাঁধা দেন। কিন্তু বাঁধা অমান্য করে জোরপূর্বক উল্টো পথে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভ্যানচালক ও দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবলের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বেড়িবাঁধ এলাকায় ডিউটিরত ছিলেন কনস্টেবল মতিউর রহমান খান। সেই ভ্যানচালক পূর্বের ঘটনার জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পুলিশ সদস্যের মাথায় সজোরে আঘাত করে। স্ট্যাম্পের আঘাতে পুলিশ সদস্যের মাথা ফেটে যায়। ভিকটিমকে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট এবং অন্যান্যদের সহায়তায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় এবং অবস্থা আংশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যেরর ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে কামরাঙ্গীচর থানায় মামলা রুজু হয়।
উপ-পুলিশ কমিশনার মো: জাফর হোসেন বলেন, মামলা তদন্তকালে লালবাগ বিভাগের কামারাঙ্গীরচর থানা পুলিশ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনা সংঘটনকারী অজ্ঞাত ভ্যানচালককে গ্রেফতারের উদ্দেশ্য সম্ভাব্য সকল স্থানের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। তদন্তের স্বার্থে কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও লালবাগের সকল ময়লা সংগ্রহের ইজারাদার ও আনুমানিক ৩০০-৩৫০ জন ময়লা সংগ্রহকারীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে ময়লার কাজে নিয়োজিত একজন অনুপস্থিত ছেলের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় এবং বিস্তারিত তদন্তে উক্ত ছেলেটির নাম-ঠিকানা প্রকাশ পায়। তার নাম মোঃ ইসমাইল হোসেন জীবন। তদন্তে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জীবন গত ২০ ডিসেম্বর ভিকটিমের সাথে বাক-বিতন্ডা জেরে রাগান্নিত হয়ে ট্রাফিক কনষ্টেবলকে ষ্ট্যাম্প দিয়ে গুরুতর আঘাত করেছে। পরবর্তীতে রংপুর জেলার গংগাচড়া এলাকা থেকে কামরাঙ্গীরচর থানার একটি টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত জীবন উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। ঘটনার দিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাগের বশবর্তী হয়ে হাজারীবাগের বাসা হতে একটি ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প নেয়। ঘটনাস্থলে ভিকটিম কনষ্টেবলকে ৩০ মিনিট ধরে পর্যবেক্ষণ করে। সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে কনষ্টেবল মতিয়ার এর মাথার পেছনে স্যাম্প দিয়ে সজোরে আঘাত করে স্ট্যাম্প ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই গ্রেফতারকৃত জীবন হাজারীবাগ হতে পালিয়ে রংপুর চলে যায়। কামরাঙ্গীরচর থানা পুলিশ রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত জীবনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।