বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া এলাকায় বংশাই নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর প্রযুক্তির সহায়তায় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে র্যাব। পাশাপাশি ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের পর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা এনামুল সানাসহ জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪।
গ্রেফতাররা হলেন- এনামুল সানা (২৭) ও সোহাগ রানা (২৮)। এ সময় উদ্ধার করা হয় নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছেন।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিক্রমপুর এলাকায় বংশাই নদীতে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র্যাবকে বিষয়টি অবহিত করে। পরবর্তী সময়ে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় OIVS (On-Sight Identification & Verification System) ব্যবহার করে নদীতে ভাসমান অজ্ঞাত নারীর মরদেহটির নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে। ভাসমান মরদেহটি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুনের।
কমান্ডার মঈন বলেন, পরবর্তী সময়ে র্যাব-৪ নিহতের পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে নিহতের ভাই বাদী হয়ে ১০ ডিসেম্বর আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি দল আশুলিয়া থানার টেংগুরী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবকে জানায়, নিহত রুবিনা খাতুন নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। ৬ মাস আগে এনামুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রেফতার এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং আগে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে ভাড়ায় নিজের মোটরসাইকেল চালান তিনি। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে অধিক বেতনে অন্যত্র চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতো।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। এনামুল রুবিনা খাতুনকে সুযোগ বুঝে তার আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বাসায় রাখেন। বাসায় অবস্থানকালীন রুবিনা এনামুলকে বারবার বিয়ের কথা বললে এনামুল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান।
এসময় বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। গত ৮ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রুবিনা এনামুলকে পুনরায় বিয়ের কথা বলায় এনামুল বিয়েতে আবারও অস্বীকৃতি জানান এবং প্রচুর রাগান্বিত হয়ে পড়লে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেফতার সোহাগ এনামুলের আত্মীয়। তারা দুজনে মিলে লাশটি নদীতে ফেলে দেয়। এনামুলের বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে সোহাগ গত ২ বছর ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি পেশায় একজন বাসের হেলপার।