রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
ঋণ পরিশোধ না করা কালচার হয়ে দাঁড়াচ্ছে: গভর্নর
/ ৭০ Time View
Update : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৪:০৪ অপরাহ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি:

ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করা লাগবে না; এমন চিন্তা একটি কালচারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণখেলাপি সমস্যা এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিআইডিএস এর তিন দিনের সম্মেলনের শেষ অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন এবং অপর্যাপ্ত সম্পদও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিরসনে ঝামেলা হচ্ছে। ঋণ খেলাপি কমানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, এটা নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ শুরু করব। কারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি আমরা।

তবে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করার কোন পরিকল্পনা নেই বলে সাব জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশ নেমে আসবে। ব্যাংক খাত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ কোটি টাকা ঢুকছে। ঋণ আরো খরুচে করা হয়েছে। এতে গত মাসে মূল্যস্ফীতি কমেছে।

আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আমরা অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলাপ করেছি, সেখানে অর্ধেকের বেশি অর্থনীতিবিদ এমন পরামর্শ দিয়েছেন।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির কারণ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই মূল্যস্ফীতি হয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত।

সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, যেহেতু অর্থনীতি এখন কিছুটা অস্থিতিশীলতার মধ্যে আছে। তাই বিদেশি ঋণ নেওয়ার সময় কিছুটা সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতের ঋণ গ্রহণে কিছু সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

অধিবেশনের সভাপতি ও বিআইডিএস মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, আশির দশকে আমরা বলতাম, ব্যাংকের পরিচালক হবেন এই খাতের অভিজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালক হবেন না। কিন্তু এখন শুনি, ৯৫ বছর বয়সী একজন নারীকে ব্যাংকের পরিচালক বানানো হয়েছে। এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়াজের দাম বেড়েছে বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি বলেন, প্রতি বছর বাংলাদেশকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে দুই দেশের সরকারের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করা যেতে পারে। ইতিমধ্যে আমরা দিল্লির সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলু, ডিম, মুরগি আমদানি বন্ধ আছে। আমদানি বন্ধ থাকলে এবং উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তখন এসব খাতের ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিতেই পারেন। আবার এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করার উদ্দেশ্য হলো, দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে স্বয়ংসম্পন্ন হওয়া। তিনি আরো বলেন, বাইরে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার কথা শোনা যায়। এটা নিয়ে বেশি কথা বলব না। আমরা নানা ধরনের সংস্কার করছি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজের দাম কেন বাড়লো, তো ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেছেন বাণিজ্য সচিব। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বাজারে গিয়ে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। মানুষ তো এসব ব্যাখ্যা বুঝবে না। অন্যদিকে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কিভাবে কমানো হবে, সেই বিষয়ে সমাধান কি জানতে চাই।

নির্বাচনে পর শক্তিশালী অর্থনৈতিক সংস্কার করার তাগিদ দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তার মতে, আর্থিক খাতের প্রায় সব জায়গায় ব্যবস্থাপনার সমস্যা আছে। এজন্য অর্থনীতি ভুগছে। নির্বাচনের পর সংস্কারের জন্য ক্ষমতাসীনদের একটি শক্তিশালী দল করা উচিত। ওই দলকে ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি জোর করে সংস্কারের মনোভাব থাকতে হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যেসব সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে, সেসব সংস্কার নিজেদের প্রয়োজনেই করা উচিত। তার মতে, মুদ্রা বিনিময় হার, সুদের হার, মূল্যস্ফীতি – এসব ঠিক করা জরুরি। এটি তাৎক্ষণিক সংস্কার। আর মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page