বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজধানীর ফকিরাপুল কালভার্ট রোড এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকসহ এক যুবদল নেতা ও এক যুবদল কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। নাশকতার উদ্দেশ্যে তারা বিস্ফোরক মজুত করেছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৬ কেজি ১০০ গ্রাম বিস্ফোরক পাউডার, ১৫৭ বোতল ফেনসিডিল, একটি ডিজিটাল পালা, ১০টি মোবাইল ফোন ও নগদ ২২ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন, মুগদা যুবদল নেতা মো. বাবুল মিয়া (৪০) ও যুবদল কর্মী মো. মাসুদ শেখ (৪৫)।
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে রাজধানীর ফকিরাপুল কালভার্ট রোড এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয় নাশকতাকারী বাবুল মিয়াকে। তিনি মুগদা থানাধীন ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদল নেতা। তিনি মুগদা থানা যুবদলের পদ প্রত্যাশী। দলের উপর মহল থেকে তাকে নাশকতামূলক কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলে উচ্চপদ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, তিনি মুগদা থানার যুবদল নেতা জসীমউদ্দিন বাবু ও মো. আল মামুন পান্নার সহযোগিতায় বোমা তৈরির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাউডার সংগ্রহ করে নিজের কাছে মজুত রাখেন। তিনি বিভিন্ন সময় দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে বিভিন্ন নেতাকর্মীর কাছে এই বিস্ফোরক দ্রব্য সরবরাহ করে আসছেন।
বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ককটেলসহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অবরোধ ও হরতালে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করে আসছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে বড় ধরনের নাশকতা সৃষ্টির জন্যই এই উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন। এর আগে, ২০১৮ সালে নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার সময় তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও বলেন, মাসুদ শেখ ১৯৯৮ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ২০০২ সালে ঢাকা আল আমিন বিস্কুট কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে ৬ বছর চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি বেশি লাভের আশায় তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ নিজেকে বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন।
গ্রেপ্তার বাবুল মিয়া রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। এছাড়া একই দলে সম্পৃক্ত থাকায় মাসুদ তার মাদক ব্যবসা বিস্তারের জন্য গত এক বছর ধরে বাবুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। গ্রেপ্তার বাবুল মিয়া মুগদা এলাকায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার পর পালিয়ে ফকিরাপুলের কালভার্ট রোডে মাসুদের বাসায় আত্মগোপন করেন। মাসুদ অর্থ দিয়ে বাবুল মিয়াকে সহায়তা করেন। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য নিজ বাসায় অতি গোপনীয়ভাবে রাখতে সহায়তা করেন।
পুরান ঢাকায় আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, আমরা তদন্ত করছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। একজন বোরকা পরিহিত নারীর ব্যাগে করে নিয়ে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল মার্কেটে নজরদারির বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলছি না। এই বিস্ফোরকের উৎস নিয়ে কাজ করছি। আমাদের গোয়েন্দারা নজরদারি করছেন।