বিশেষ প্রতিনিধি:
২০৩০ সালে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি দ্বিগুণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত ‘ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু ডেনিম রপ্তানিতে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষস্থানে; এমনকি আমাদের অবস্থান চীনের চেয়েও উপরে। ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের এই সাফল্যের পেছনে বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর বিশাল অবদান রয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন,বিশ্বের সেরা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে। এটা বেশ গৌরবের ব্যাপার ও আশাব্যঞ্জক।
টিপু মুনশি বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল হয়েছে।আমরা এখানে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই। শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে, তাদের (শ্রমিকদের) ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। এতে তারা সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার পাবে। চাল, ডাল, অন্যান্য খাবার পাবে।
বক্তব্য দেওয়ার পর বাণিজ্যমন্ত্রী দুইদিন ব্যাপী বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে ডেনিম ও ডেনিম সম্পর্কিত পণ্য রপ্তানি হতে। সুতরাং, ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ডেনিম রপ্তানি দ্বিগুণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও স্টারলিং গ্রুপের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ইতিহাস। তারপরও দুঃখের বিষয় এটা নিয়ে অনেক শ্রমিক নেতাই আন্দোলন করছেন। কিছু শ্রমিক নেতাদের বলবো, বাংলাদেশকে ভালোবাসুন। এটা কখনো কম না, এটা অনেক ভালো। এর বেশি দেওয়ার সক্ষমতা শিল্প মালিকদের নেই৷
তিনি বলেন, এটা সম্ভব। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সাস্টেনিবিলিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি সাধন করেছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি যে ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের পছন্দের পোশাক সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেবে।
তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকরা অত্যন্ত ভদ্র। তাদেরকে যা করতে বলা হয়, তারা তাই করে। আমাদের সেই ১২ হাজার ডলার রপ্তানি থেকে শুরু করে ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় পর্যন্ত তাদের অবদান আমি অস্বীকার করি না। আমি তাদের অবদান স্বীকার করি। কিন্তু, যদি বেতন বাড়িয় দেওয়ার পরেও এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে৷ তাদের হাতে অনেক অপশন আছে। তাই সবাইকে কাজে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই।
বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) হতে লিড সনদপ্রাপ্ত ২০৩টি সবুজ পোশাক কারখানা রয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সবুজ কারখানার উপস্থিতি সাসটেইনিবিলিটির প্রতি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করে। বিশ্বের সেরা ১০০টি সবুজ কারখানার মধ্যে এখন ৫৩টি বাংলাদেশে অবস্থিত।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এই মুহূর্তে ইউরোপ ও আমেরিকায় সর্বোচ্চ ডেনিম পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। পরিমাণের দিক থেকে ইউরোপেও সর্বোচ্চ ডেনিম রপ্তানি করে বাংলাদেশ। গত ১ দশকে ডেনিমের উন্নয়নে ফরোয়ার্ড এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ফলস্বরূপ আজ ডেনিমে বাংলাদেশের এই অবস্থান। আমরা আমাদের শ্রমিকদের প্রতি যত্নশীল, এজন্য সরকার শ্রমিকদের মজুরি বাড়িয়েছে। এছাড়া, আমরা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্যও কাজ করছি।
পরিবেশরক্ষায় বিজিএমইএর প্রভাব আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ লিড পোশাক কারখানা বাংলাদেশের।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি বলেন, বর্তমানে বিজিএমইএ এবং সরকার দেশে পোশাক শিল্প যাতে নির্বিঘ্নে ভাবে পরিচালিত হতে পারে, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশে যে নিরাপদ ব্যবসায়িক পরিবেশ বিরাজমান, বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আসরের সফল আয়োজন তাই প্রমাণ করে।
জিয়াউর রহমান, রিজিওনাল কান্ট্রি ম্যানেজার, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়া, এইচএন্ডএম,বলেন, এইচএন্ডএম ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৬ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কোম্পানির জন্য বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করতে এইচএন্ডএম একটি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ডেনিম শিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। ডেনিম শিল্পের সেই অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর ১৫তম আয়োজনে ১২টি দেশের মোট ৮০ জন প্রদর্শক অংশ নিচ্ছেন। বুধবার থেকে শুরু হওয়া ২ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচ হাজার দর্শনার্থী নিবন্ধন করেছেন। ডেনিম এক্সপোর এবারের আসরে মোট চারটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল।