বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে পুঁজি করে যারা নাশকতার চেষ্টা করলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
রবিবার (৫ নভেম্বর) বিকালে বলেন, ‘মিরপুর, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা থেকে সহিংসতা করেছিল। তবে আজ এখন পর্যন্ত কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। গার্মেন্টস শিল্পে যারা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে তাদের শনাক্তে কাজ করছে র্যাব। ইতোমধ্যে নাশকতাকারী অনেকে চিহ্নিত হয়েছে।’
র্যাব জানায়, শ্রমিক আন্দোলনকে পুঁজি করে যাতে কেউ কোনো ধরনের নাশকতা-সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানা এলাকায় র্যাবের টহল বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য র্যাব পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করছে। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে র্যাবের কঠোর অবস্থানের কারণে ঢাকা ও আশপাশের গার্মেন্টসের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল মো. মাহবুব আলম, অপারেশন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান, লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আলমঈনসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজধানী ঢাকার মিরপুর ও সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরের কোনাবাড়ি, ভোগড়া, শফিপুর এলাকায় সহিংসতার হওয়া গার্মেন্টসগুলোতে পরিদর্শন করেন। সেখানে সহিংসতা প্রতিরোধে মালিক-শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় র্যাব কর্মকর্তারা সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দেন। পরে কারখানায় শ্রমিকরা আন্দোলন না করে স্বাভাবিক যোগ দিয়েছেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, ‘কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থির করতে চেয়েছিল, ভবিষ্যতে যারা এই শিল্প নিয়ে অরাজকতার চেষ্টা করবে, পেছন থেকে হোক বা মাঠে থেকে হোক তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে র্যাব শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যার কারণে পোশাক সেক্টরে আজ স্বাভাবিক কার্যক্রম বিরাজমান।’
আল মঈন বলেন, কতিপয় দুস্কৃতিকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি পোশাক খাতকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে পোশাক শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। শ্রমিকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হলেও ওই চক্রটি বার বার উস্কে দেয় শ্রমিকদের। এজন্যই র্যাব সদরদফতর, র্যাব-১ থেকে ৪ ব্যাটালিয়নের সিও এবং ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শনে যান। এসময় সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয় এবং নাশকতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।’
কমান্ডার আল মঈন বলেন, ‘গার্মেন্টস সেক্টরে চলমান সহিংসতা প্রতিরোধ ও শান্তিপ্রিয় পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তারা যেন তাদের কর্মস্থলে নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে তার জন্য র্যাবসব অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল পরিচালনাসহ পুলিশ ও বিজিবির সাথে যৌথ টহল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কোনো দুস্কৃতিকারীরা যেন পোশাক শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে কোনো ধরণের সহিংসতা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্টসসমূহ চিহ্নিত করে ওই এলাকার পোশাক শ্রমিকরা যেন নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারে সে জন্য র্যাবের টহল জোরদারসহ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গার্মেন্টসে নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনার মূলপরিকল্পনাকারী এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার আসামি ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে র্যাব। এছাড়াও গার্মেন্টসে নাশকতা ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে কেউ মদদ দিচ্ছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। গার্মেন্টসের বিভিন্ন সংগঠন বা শ্রমিক সংগঠনগুলো যারা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে কাজ করছে র্যাব তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুস্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীরা নাশকতা ও সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা এই ধরণের নাশকতা ও সহিংসতার সাথে জড়িত ছিল, তাদেরকে সিসিটিভি ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছে র্যাব। এছাড়া বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনলাইনে সুযোগ সন্ধানীমহল বিভিন্ন উসকানীমূলক তথ্য ও গুজব ছড়াচ্ছে; বিভিন্ন ধরণের ভিডিও এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জনমনে আতংক সৃষ্টির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম এসকল দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সার্বক্ষণিক সাইবার জগতে নজরদারী রাখছে।’
জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।