রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
অনলাইন জুয়ার সাইটের মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের ৪ জন গ্রেফতার: র‌্যাব
/ ৪৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি:

ক্রিকেট বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের মাধ্যমে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. নিশাত মুন্না (২০), মো. কামরুল ইসলাম শুভ (২৭), মো. সুমন (৩৫) ও মো. নাজমুল হোসেন বাবু (৩১)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ১৬টি মোবাইল ফোন, ১৮টি সিম কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর উদ্ধার করা হয়।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) গাজীপুরের শ্রীপুর ও রাজধানীর মালিবাগে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে চক্রটি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম বাংলাদেশে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সাইটের কার্যক্রম এদেশে পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা নিশাত মুন্না। তার নেতৃত্বে চক্রের ৭-৮ জন সদস্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের প্রচার, অ্যাকাউন্ট খোলা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন, হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অর্থ পাঠানোর সঙ্গে জড়িত।

মূলত ফুটবল বিশ্বকাপ, ক্রিকেট বিশ্বকাপ, আইপিএল, বিপিএল, বিভিন্ন ফুটবল লিগ/টুর্নামেন্ট ও অন্যান্য খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের তরুণদের টার্গেট করে এই অনলাইন জুয়ার প্রচার চালাতো চক্রটি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ চক্রের কেউ বিভিন্ন বিদেশি বেটিং সাইটের বাংলাদেশের প্রচার/মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন, কেউ আগ্রহী ব্যক্তিদের বিভিন্ন সাইটের অ্যাকাউন্ট খুলে দিতেন, কেউ আবার অ্যাকাউন্ট করা ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তা হুন্ডির মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে প্রেরণ করতেন।

তিনি বলেন, চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে কনটেন্টের সঙ্গে জুয়ার সাইটের বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন, সরাসরি মানুষের কাছে বলার মাধ্যমে এই জুয়ার সাইটের প্রচারের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। পরে বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাকাউন্ট খুলতেন। কোনো নতুন গ্রাহক তাদের মাধমে বেটিং সাইটে অ্যাকাউন্ট খুললে তারা কমিশন পেতেন।

গ্রেফতাররা 1xBet, MeltBet, PariMatch, Velkiex, BjBaji Casino, Ludo Match-সহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার সাইটের কার্যক্রম দেশে পরিচালনার সঙ্গে জড়িত।

র‌্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি কর্তৃক অনলাইন জুয়া বা বাজি সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট এর আগে বন্ধ করা হলেও তারা ডোমেইন পরিবর্তন করে পুনরায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে জুয়া চালু করেন। তারা নামে-বেনামে একাধিক সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে অনলাইন জুয়ার অর্থ সংগ্রহ করতেন এবং প্রাপ্ত অর্থ থেকে নিজেদের লভ্যাংশ রেখে অবশিষ্ট টাকা তারা হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাতেন।

গ্রেফতাররা নিজেদের প্রাপ্ত লভ্যাংশের টাকা দিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলতেন এবং নষ্ট করতেন বলে জানিয়েছেন। তারা অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে এ পর্যন্ত অর্ধ কোটি টাকার অধিক অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা যায়।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার নিশাত মুন্না বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম মূলহোতা। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়লয়ে তড়িৎ প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত। তিনি NISHAT MUNNA নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল এবং Nishat Munna (সাইলেন্ট কিলার) নামে একটি ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন রোস্টিং/বিতর্কিত ভিডিও তৈরি করে প্রচার করতেন। দেড় বছর আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গ্রুপের বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে এর প্রতি আসক্ত হন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার নিশাত অনলাইনের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বেটিং সাইটের প্রসারের জন্য ভিডিও বানাতে তাকে দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। পরে তিনি অধিক অর্থ লাভের আশায় বিভিন্ন বেটিং সাইটের প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হন। তার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে তার তৈরি করা ভিডিওতে বিভিন্ন অনলাইন জুয়া সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচার করতেন। প্রতিটি ভিডিওতে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে সিতেন বলে জানা গেছে।

পরে তিনি নিজেও অনলাইন জুয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহী ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের অনলাইনে বিভিন্ন জুয়ার সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার বিষয়ে গ্রেফতার কামরুলের কাছে প্রেরণ করেন।

গ্রেফতার কামরুল স্নাতক শেষ করে একটি মোবাইল কোম্পানির সেলস রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করতেন। দেড় বছর আগে থেকেই গ্রেফতার নিশাতের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার পরিচয় হয়। পরে তিনি নিশাতের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ায় জড়িযে পড়েন।

কামরুল স্বল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরিচিত লোককে অনলাইন জুয়ার সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্বুদ্ধ করতেন এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের অনলাইন জুয়ার বিভিন্ন সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতেন। তিনি প্রতিটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ৩০০ টাকা কমিশন পেতেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার সুমন অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজধানীর মালিবাগে স্টেশনারী ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতেন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসার সুবাধে কামরুলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে কামরুল তাকে স্বল্প সময়ে অধিক অর্থ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বেটিং সাইটের অ্যাকাউন্ট খুলে দেন এবং তার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জুয়ার সব টাকা লেনদেন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। সুমন পরিচয় গোপন করে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য কৌশলে তার পাশের এক মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসায়ীর নামে নিবন্ধনকৃত সিম সংগ্রহ করেন, যাতে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট হিসাবে লেনদেন করা যেতো।

পরে সুমন বিভিন্ন অনলাইন বেটিং সাইটের সব ধরনের লেনদেন ওই মোবাইল সিম দিয়ে নিবন্ধনকৃত মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতেন। এছাড়াও তিনি নামে-বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয় অর্থ তিনি নিশাত মুন্না ও কামরুলের সহায়তায় হুন্ডির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠাতেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার নাজমুল নোয়াখালীতে থাই গ্ল্যাসের এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করতেন। তিনি এক বছর আগে কামরুলের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি নোয়াখালী অঞ্চলে বেটিং সাইটের জন্য গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করতেন এবং বেটিং সাইটে টাকা রিচার্জ/বেটিং সাইট থেকে টাকা উত্তোলনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

এছাড়াও নাজমুল নামে-বেনামে বিভিন্ন সিম সংগ্রহ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেন করতেন। তিনি কামরুল ও নিশাত মুন্নার সহায়তায় গ্রাহকদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ পার্শ্ববর্তী দেশে অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফর্ম পরিচালনাকারীর কাছে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page