বিশেষ প্রতিনিধি:
পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ থাকা ১০ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গাইল তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারে অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় বিজিএমইএ।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, তৈরি পোশাক রপ্তানির আড়ালে ঢাকা ও গাজীপুরের ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে দেশের গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রচার হয়। এরপর প্রাথমিক সত্যতা পায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এই তথ্য মিথ্যা ও বানোয়াট, এর মাধ্যমে দেশকে ছোট করা হয়েছে এবং বায়ারের কাছে উদ্যোক্তাদের ছোট করা হয়েছে। এর পেছনে একটি চক্র কাজ করছে বলেও দাবি করা হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শিল্প যখন জাতীয় অর্থনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে অবদান রেখে অদম্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কেউ অমাদের আটকে রাখতে পারছে না… তখন আমরা গভীর বিস্ময়ের সঙ্গ দেখছি যে, সম্প্রতি কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। আর দেশের প্রধান দৈনিকগুলো বিভিন্ন শিরোনামে তা ছেপেছে। এ ধরনের চিঠি, প্রেস রিলিজ ও এ ধরনের মিডিয়া ক্যাম্পেইন আসলে কার স্বার্থে করা হয়েছে, এটা আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন।
তিনি বলেন, উল্লেখিত বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করাটা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। যে ১০টি কারখানার বিষয়ে অভিযোগ এসেছে, তার মধ্যে চারটি বিজিএমইএর এবং দুইটি বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- সাভারের প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, গাজীপুরের পিক্সি নিট ওয়্যারস ও হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড, ঢাকার ফ্যাশন ট্রেড, এম ডি এস ফ্যাশন, থ্রি স্টার ট্রেডিং, ফরচুন ফ্যাশন, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড, স্টাইলজ বিডি লিমিটেড ও ইডেন স্টাইল টেক্স। এর মধ্যে বিজিএমইএর চারটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- ফ্যাশন ট্রেড, প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড, অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড ও হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড। বিকেএমইএর দুইটি সদস্য প্রতিষ্ঠান হলো- পিক্সি নিট ওয়্যার ও ইডেন স্টাইল টেক্স। এসব কারখানার মাধ্যমে কোনো অর্থপাচার হয়নি। আমরা তদন্তের দাবি জানাই এবং প্রমাণ না হলে অপপ্রচারকারীদের সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চাইতে হবে।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিল অব এক্সপোর্টগুলো পর্যালোচনা করে বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ওই ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে ওই ব্যাংক সম্পর্কিত নয়। ফলে ব্যাংকটির মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপির রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসিত হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী ও সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ কারখানাগুলোর মালিকরা।