বিশেষ প্রতিনিধি:
ফরিদপুর সদরপুরে পরকীয়ার সন্দেহে বোন জামাইকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী হত্যার দায়ে ঘাতক স্বামী হাবুল বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঢাকার তুরাগ কামারপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৩ আগস্ট ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে রাবেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে ফরিদপুর সদরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
র্যাব জানায়, স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে ভিকটিম রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী হাবুল। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য মোল্লাকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনার করে। সূর্য মোল্লার রাবেয়ার প্রতি আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। সে ভিকটিমকে মেরে ফেললে আগের ধার করা টাকা ফেরত দিতে হবে না এই চিন্তা করে হাবুলের কথা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে সম্মতি ও সহযোগিতা করতে রাজি হয় এবং রাবেয়াকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, হাবুল গত ৭ বছর আগে ভিকটিম রাবেয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর থেকেই ভিকটিম রাবেয়ার বাবার বাড়িতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল হাবুল। বিগত কয়েক মাস ধরেই তার স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ছিল। মূলত সে তার স্ত্রী রাবেয়ার পরকীয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করত। এছাড়াও হাবুলের স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। সে ফার্নিচার দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করত। যার ফলে তার উপার্জন কম ছিল। ভিকটিম রাবেয়া বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করত বলে জানা যায়।
তিনি আরও বলেন, হাবুলের উপার্জন কম থাকায় প্রায়ই সে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের বিভিন্ন খরচের জন্য টাকা চাইত। যেহেতু ভিকটিম রাবেয়া চাকরির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করতো এজন্য সে তার স্বামীকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করতো। যার ফলে হাবুলের ভিকটিম রাবেয়ার প্রতি পরকীয়ার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। হাবুলের দুলাভাই সুর্য মোল্লা বিভিন্ন সময়ে ভিকটিম রাবেয়ার কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছে এবং ধার করা টাকা পরিশোধের জন্য ভিকটিম রাবেয়া চাপ প্রয়োগ করলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি এবং ঝগড়া হতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, একপর্যায়ে হাবুল স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে ভিকটিম রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য মোল্লাকে পরিকল্পনার বিষয়টি জানায়। সূর্য মোল্লার ভিকটিম রাবেয়ার প্রতি পূর্ব থেকেই ক্ষোভ ছিল এবং সে ভিকটিমকে মেরে ফেললে পূর্বের ধার করা টাকা ফেরত দিতে হবে না। এই চিন্তা করে সে হাবুলের কথা অনুযায়ী ভিকটিমকে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে সম্মতি ও সহযোগিতা করতে রাজি হয়।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ আগস্ট রাতে হাবুলের দুলাভাই ভিকটিমের বাড়িতে যায় এবং বাসার সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খায়। রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে সন্তানেরা ঘুমিয়ে পড়ে। হাবুল, সূর্য মোল্লা ও ভিকটিম চেয়ারে বসে আলাপচারিতা করছিল। একপর্যায়ে হাবুল সুযোগ বুঝে অতর্কিতভাবে ভিকটিমের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে ও হাবুলের দুলাভাই ভিকটিমের হাত পেছন থেকে চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে।
তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে এজন্য ভিকটিমের মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে ঘরের পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকির মধ্যে ফেলে দেয়। হাবুলের দুলাভাই রাতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন সকালে ভিকটিমের মা হাবুলের কাছে রাবেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাবেয়া এনজিও’র কাজে অফিসে গেছে বলে জানায় এবং তার শাশুড়িকে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে।
একপর্যায়ে হাবুল তার শাশুড়িকে জানায়, জরুরি কাজে তাকে ঢাকা যেতে হবে এবং সে কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করে। হাবুল আত্মগোপনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে বেশকিছু স্বর্ণ ও রুপার অলংকার এবং গচ্ছিত টাকা নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।