নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে তীব্র দাবদাহ। টানা তিন দিন ধরে বেড়ে চলেছে তাপমাত্রার পারদ। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে গরম আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে; কিন্তু জ্বালানির অভাবে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। তাই গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।
দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৪১ ডিগ্রির ঘরে। তীব্র তাপের অনলে পুড়ছে উত্তরের জেলা দিনাজপুর! গতকাল সেখানে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাই উত্তরের ঐ জেলায় ৬৫ বছর পর এবার তাপমাত্রার রেকর্ড হলো ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস! উত্তরের জেলাগুলোতে ভ্যাপসা গরমে মানুষ যেন সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। খোদ রাজধানীর তাপমাত্রাও এর কাছাকাছি অবস্থান করছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। দাবদাহ থেকে বাঁচতে তাই বৃষ্টির আকুতি সাধারণ মানুষের। তবে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, গরম থেকে আপাতত নিস্তার নেই। ৮ বা ৯ জুনের পর বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ ৭ জুন পর্যন্ত দেশের দাবদাহ অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল হামিদ বলেন, বর্ষাবাহী মৌসুমি বায়ু উপকূলের কাছাকাছি চলে আসায় বাতাসে ব্যাপক পরিমাণ জলীয়বাষ্প ভেসে আসছে। জলীয়বাষ্প বেশি থাকলে গরমের অনুভূতিও বেশি হয়। ফলে এখন ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপপ্রবাহ দেশের চার জেলায় তীব্র রূপধারণ করেছে। ৪৪ জেলায় চলছে মৃদু থেকে মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তাপমাত্রা অস্বাভাবিক।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে অনুভূত ছিল ৪২ ডিগ্রি। এর আগে রাজধানীতে জুন মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৪ সালে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের আগামী এক মাসের দেওয়া পূর্বাভাসে বলেছে, এই জুন মাসে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে এক থেকে দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ৮ জুন নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। জুন মাসে কম বৃষ্টির কথা বলা হলেও এ মাসে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে জুন মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ১-২টি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সে.) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে এক-দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আভাস নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করতে পারে। এতে চার-ছয় দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বজ্র ঝড় হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
তাপপ্রবাহের আভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ আগামী চার থেকে পাঁচ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদরা জানান, তাপপ্রবাহ আগামী এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী ও সৈয়দপুর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সিলেট, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকা, ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগ এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বাকি জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হয়ে যাচ্ছে।