স্পোর্টস ডেস্ক : সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। তৃতীয় ম্যাচ জিতলেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবতো লঙ্কানরা।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে স্বাগতিকরা সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪২.৩ ওভারে গুটিয়ে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৮৯ রান।
লঙ্কানদের ছুড়ে দেওয়া ২৮৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নড়বড়ে হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। দলীয় ৯ রানেই স্বাগতিকরা হারিয়ে বসে ২ উইকেট। লিটন দাসের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ ওপেনিংয়ে নেমে মাত্র ১ রান করেই বিদায় নেন। আগের দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচে ব্যর্থ হব সাকিব আল হাসানও।
অধিনায়ক তামিম ইকবাল ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও বেশিদূর যেতে পারেননি। লঙ্কান পেসার চামিরার শিকার হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৯ বলে ১৭ রান। আগের দুই উইকেটও চামিরাই তুলে নিয়েছেন। এমন বিপর্যয়ের মুখে মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম।
টানা দুই ম্যাচ প্রায় একাই ব্যাট হাতে দলকে টেনে নিয়ে গেছেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় ম্যাচেও দলের বিপর্যয়ে হাল ধরেছিলেন। কিন্তু এবার আর পারলেন না অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। লঙ্কান স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন মুশফিক। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৮৪ ও ১২৫ রান করা মুশি আজ বিদায় নিয়েছেন ৫৪ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে। যাওয়ার আগে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তিনি।
চাপে পড়ে যাওয়া দলকে পথে দেখাচ্ছিলেন মোসাদ্দেক। দেখেশুনে খেলে তুলে নিয়েছিলেন ফিফটিও। কিন্তু এর ঠিক পরেই লঙ্কান স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের বলে বিনুরা ফার্নান্দোর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিদায় নেন ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসে ৭২ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৫১ রান। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৫০ বলে ৪০ রানের জুটিও গড়েছিলেন তিনি।
মোসাদ্দেক বিদায় নেওয়ার পর মাহমুদউল্লাহকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন আফিফ হোসেন। কিন্তু দলকে আরও বিপাকে ফেলে ১৭ বলে ১৬ রান করে বিদায় নেন আফিফ। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদরা রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটেন। তাসকিনকে বিদায় করে ম্যাচে নিজের পঞ্চম উইকেটের দেখা পান চামিরা।
অন্য প্রান্তে উইকেট পতনের মিছিলের মাঝে পাল্টা আক্রমণের পথ ধরেন মাহমুদউল্লাহ। পুরো সিরিজে মুশফিকের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান তুলে নেন ফিফটিও। কিন্তু যোগ্য সঙ্গের অভাবে অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করতে গিয়ে ফার্নান্দোর বলে ডিকভেলার হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। সেখানেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার চামিরা একাই নেন ৫ উইকেট। ৯ ওভার বল করে এই পেসার খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও রমেশ মেন্ডিস। বাকি উইকেট ফার্নান্দোর।
এর আগে এর আগে মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠান শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে কুশলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ফিফটিতে ভর করে লড়াকু সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। কুশল অবশ্য ব্যক্তিগত ৬৬, ৭৯ এবং ৯৯ রানে অর্থাৎ তিন বার জীবন পান। বল হাতে বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ নেন ৪ উইকেট। ১ উইকেট শরিফুলের। বাকি উইকেট আসে রান আউট থেকে, যেখানে মূল ভূমিকা শরিফুলের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (কুশল পেরেরা ১২০, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৫৫*; তাসকিন ৪৬/৪, শরিফুল ৫৬/১)
বাংলাদেশ: ৪২.৩ ওভারে ১৮৯/১০ (মোসাদ্দেক হোসেন ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৫৩; চামিরা ১৬/৫, হাসারাঙ্গা ৪৭/২, রমেশ মেন্ডিস ৪০/২)
ফলাফল: ৯৭ রানে জয়ী শ্রীলঙ্কা
সিরিজ: ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ
ম্যাচ সেরা: দুষ্মন্ত চামিরা (শ্রীলঙ্কা)
সিরিজ সেরা: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)