রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
কৃষি প্রণোদনার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন এখন কৃষকের গলার কাঁটা
/ ৩৩৫ Time View
Update : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি প্রণোদনায় প্রদান করা ভর্তুকির কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন এখন বরিশালের কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের সাথে এসিআই কোম্পানীর চুক্তিতে অতিরিক্ত মূল্য এবং কোম্পানীর অতিরিক্ত টাকার চাহিদা পূরণ করতে না পারায় কোম্পানীর মামলার হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পরেছে ভুক্তভোগী চাষীদের পরিবার।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের নাঘার গ্রামের স্বপন বল্লভের ছেলে ভুক্তভোগী কৃষক বাদল বল্লভ ও একই এলাকার যতীন্দ্র নাথ মুহুরীর ছেলে উত্তম মুহুরী জানায়, তারা যৌথভাবে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে তারা ধান কাটা ও মাড়াই করার জন্য ২৯ লাখ টাকা মূল্যের একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন এসিআই কোম্পানীর মাধ্যমে গ্রহণ করে। সেসময় ওই মেশিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ২৯ লাখ টাকা।

এরমধ্যে সরকারের ভর্তুকি রয়েছে ১৪ লাখ টাকা এবং বাকি ১৫ লাখ টাকার মধ্যে তারা ৫ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদান করে। তবে তাদের প্রথমে জাপানী মেশিন দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে চায়না মেশিন দেয়া হয়। যা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশী বলেই তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে এসিআই কোম্পানী। ওই বছর ভুক্তভোগী ওই কৃষকেরা বিভিন্ন এলাকার ধান কেটে ৩ লাখ টাকা কিস্তি পরিশোধ করে।

এরমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্যার পানি জমিতে জমায় ধান কাটতে না পারায় কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয় ওই কৃষকেরা। কিস্তি না দেয়ার কারণে চলতি বছরের ১৫ মে এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসের রিকভারী অফিসার মামুনুর রহমান কাউকে কিছু না জানিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন থেকে ইসিইউ নামের একটি যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়। ওই যন্ত্রটি খুলে নেওয়ার কারণে বর্তমানে মেশিনটি কোন রকমেই চালু করা সম্ভব নয়। এরপর থেকে মেশিনটি নাঘার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পরে থাকায় রোদ-বৃষ্টি ও ঝড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে এসিআই কোম্পানীর ওই রিকভারী অফিসার মামুনুর রহমান অন্যত্র বদলি হয়ে যায়। বর্তমানে মেশিনটি মেরামত করতে গেলে লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন হবে। বাদল বল্লভ জানান, তারা মেশিন গ্রহণের সময় নগদ ৫ লাখ টাকা ও কিস্তিতে ৩ লাখ টাকাসহ মোট ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসে তাদের কাছে ৭ লাখ টাকা পাওনা থাকলেও উল্টো তারা আরও ৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা তাদের পাওনা বলে দাবি করে আসছে। যা ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বেশি দাবি করছে তারা। তাদের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ না করলে ওই কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা করার অব্যাহত হুমকি দিয়ে আসছে।

সরকারের ভর্তুকি মূল্যের কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনটি উল্লেখিত দুই কৃষককে দেয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বাদল বল্লভ ও উত্তম মুহুরীকে দেয়া হলেও মেশিনের যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়ার ঘটনা তাকে কেউ জানায়নি। বাদল ও উত্তম অফিসে এলে তিনি এসিআই কোম্পানীর সাথে কথা বলে মেশিন মেরামতসহ সমস্যার সমাধান করবেন।

এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসের রিকভারী অফিসার খোরশেদ আলম জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে আমাদের বক্তব্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে। যার কারণে আমরা কোন বক্তব্য দিতে পারবোনা। এরপরেও তিনি বলেন, মেশিন গ্রহণ করা কৃষক বাদল বল্লভ ও উত্তম মুহুরী বরিশাল অফিসে এলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

এদিকে এসিআই কোম্পানীর বরিশাল জোনাল অফিসে গিয়ে রিজিওনাল অফিসার দিলকাতুর রহমান ও এরিয়া ম্যানেজার অরুণ কুমারের সাথে কথা বলতে চাইলেও তারা এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page