themeswala
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/swadhin/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114
অনলাইন ডেস্ক: শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর হলেও আধুনিকতায়-নান্দনিকতায় এটি পেছনে ফেলেছে অনেক জেলা শহরকেও। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সাজানো শহর শ্রীমঙ্গল পর্যটকদের আনাগোনা থাকে বছর জুড়েই। শীত কিংবা বর্ষায় এখানে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে তার আপন খেয়ালে।
খুব ভোরেই ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ঘণ্টা দুয়েক বাইক রাইড করেই আমরা পৌঁছে গেলাম বহতা মেঘনার বুকে নির্মিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুতে। মেঘনার বুকে দাঁড়িয়ে মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে চোখে পড়লো দুই তীরের জনপদ ভৈরব ও আশুগঞ্জের কর্মচাঞ্চল্য।
কিছুদূর এগুলেই হোটেল রাজমনি। এখানেই সকালের নাস্তার জন্য বিশ মিনিটের হোটেল বিরতি। হোটেল ব্রেকের পর টানা দেড় ঘন্টার ড্রাইভিংয়ে পৌঁছে গেলাম প্রকৃতির অকৃত্রিম রূপসী, মায়াবী জনপদ শ্রীমঙ্গলের প্রবেশদ্বারে!
সড়ক পথে শ্রীমঙ্গলে পা রাখতেই আপনাকে স্বাগত জানাবে চা কন্যার অপরূপ ভাস্কর্য! চায়ের কচি পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত চা কন্যার এই ভাস্কর্য শুভ্র সাদা পাথরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য।
শ্রীমঙ্গলের সীমারেখায় প্রবেশ করার মুহূর্ত থেকেই আপনি একটা রোমাঞ্চকর ভ্রমণ উপভোগ করতে শুরু করবেন। আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ, কোথাও উঁচু কোথাও নিচু, সবুজের চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে আবৃত্ত পাহাড়-টিলার জনপদ শ্রীমঙ্গল।
সাতগাঁও চা কন্যার ভাস্কর্য থেকে ২০ মিনিটের পথ শ্রীমঙ্গল শহর। শহর পেড়িয়ে ভানুগাছ সড়ক ধরে মাত্র ৩ মিনিট এগিয়ে গেলেই আপনি প্রবেশ করবেন এক স্বর্গপুরীতে!
উঁচু-নিচু পাহাড় ঘেরা বন-বনানী আর সুনীল আকাশের যেন সবুজ পাহাড়ের মিতালী! এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। সারি সারি চা-বাগানের বুক চিরে পিচঢালা মসৃণ পথে এগিয়ে চলেছি আমরা। প্রকৃতি এখানে নিজেকে সবুজের চাদরে আবৃত করেছে পরম যত্নে।
একই উচ্চতার ছাঁটে চা বাগান এক নজরকাড়া নৈসর্গিক রূপে নিজেকে মেলে ধরেছে। বিস্তৃত সবুজ চা-বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ছায়া বৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নানা প্রজাতির গাছপালা। ছায়াবৃক্ষের শাখায় সুরের মূর্ছনায় কলরব ছড়াচ্ছে পাখিদের দল।
বিচিত্র বৃক্ষে শোভিত সড়ক ধরে যতই সামনে এগিয়ে চলবেন ততই নিসর্গের গভীরে নিজেকে সমর্পণ করবেন। প্রকৃতির সুরম্য এক নিকেতন নিসর্গের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। ফিনলে টি-এস্টেট, নূরজাহান টি-এস্টেট অপরূপ বাগানগুলো পেছনে ফেলার মুহুর্তে রাবার বাগান, লেবু বাগানের সতেজ শোভায় তৃপ্ত না হয়ে উপায় নেই।
অনিন্দ্য সুন্দর চা বাগানের শেষ যেথায় অরণ্যের সৌন্দর্যের সূচনা সেথায়! ভানুগাছ সড়ক ধরে ভূবন মোহন রূপসী চা য়ের রাজ্য শেষ হতেই আপনি পা রাখবেন শতাব্দীর স্মারক বিচিত্র উদ্ভিদ আর বন্যপ্রাণী বৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে!
গহীন অরণ্যের বুক চিরে নিস্তব্ধতাকে সঙ্গী করে যখন বনে ভেতরে প্রবেশ করবেন ভর দুপুরেও আলো-আঁধারির ধাঁধায় পড়তে আপনি বাধ্য। ঝকঝকে নীল আকাশকে সঙ্গী করে এ বনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই তা হারিয়ে যাবে বনের ঘন উদ্ভিদ সমারোহের প্রভাবে।
মৃদু আলোয় ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ ঘন বৃক্ষের ফাঁক গলে এক চিলতে আলোকরেখা আপনাকে রোমাঞ্চকর এক পথচলার অভিজ্ঞতায় সিক্ত করবে। ঘন গাছ-গাছালিতে ঘেরা হনুমান, বানর, বন বিড়াল, বন মোরগ, সাপ নানা প্রজাতির বন বাসিন্দাদের ভুবনে আপনি প্রকৃতির অতি কাছাকাছি অনুভব করবেন নিজেকে।
প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ আপনাকে নির্জন জনশূন্য অরণ্যে অতিক্রম করতে হবে। আকাশচুম্বী বৃক্ষরাজি যেন এ বনের ছাউনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যের তেজস্বী আলো এখানে ভূমি স্পর্শের সুযোগ পায় না বললেই চলে। দেশের রেইন ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত এ বন বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
গহীন অরণ্য পাড়ি দেওয়ার রোমান্টিক অ্যাডভেঞ্চারে আপনি মুগ্ধ হবেন দারুণভাবে। চেনা-অচেনা বৃক্ষ-লতাগুল্ম, তরু-ছায়ার এমন নিবিড় যুথবদ্ধতা ভ্রমণের ক্লান্তিকে নিমেষেই ভুলিয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত।
বনের ঠিক মাঝখানটায় উদ্যানে প্রবেশের জন্য ফটক অবস্থিত, বন-বনানীর ছায়া ঘেরা প্রকৃতি উপভোগ করতে বন বিভাগের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ টাওয়ার,ওয়াক ওয়ে ও রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। লাউয়াছড়া অরণ্যে প্রবেশদ্বারে ছোট্ট টংয়ে চায়ের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে সামনে ভানুগাছ বাজার হাতের ডানে মোড় নিয়ে যেতে পারেন মাধবপুর লেকে। সেখানকার স্বচ্ছ পানিতে ভাসমান শাপলার সৌন্দর্যে বিমোহিত হন পর্যটকরা।মাধবপুর লেক থেকে কিছুদূর এগিয়ে একদম ভারত সীমান্তে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন যেতে পারেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ হামিদুর রহমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বর্ডার গাড বাংলাদেশের উদ্যোগে ও তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত স্মৃতিসৌধ চা বাগানের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
সারাদিন শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, লাউয়াছড়া উদ্যান ও হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ঘুরে বেড়িয়ে সন্ধ্যায় নীলকণ্ঠ কেবিনের সাত রঙের চা হতে পারে আপনাকে চাঙা করার দারুণ এক প্রয়াস।
শ্রীমঙ্গলের পানসী রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সেরে নিতে পারেন অনায়াসেই। আমরা সন্ধ্যা ৬ টায় রওনা দিয়ে ১১ টায় ঢাকা পৌঁছে যাই নিরাপদে।