স্বাধীনতা টিভি, অনলাইন: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিববাহিনীর অধিনায়ক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম শেখ নূরুল হক বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বোন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রথম যুব সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশে যুব রাজনীতির সূচনা করেন। শেখ ফজলুল হক মনি ব্যক্তিজীবনে দুই পুত্রসন্তানের জনক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি শাহাদত বরণ করেন।
শেখ মনি ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯৫৮ সালে। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ ফজলুল হক মনি কেবল রাজনীতি নয়, সাহিত্য, সাংবাদিকতায়ও অবদান রাখেন। তাঁর ‘অবাঞ্ছিতা’ উপন্যাস পাঠক সমাদৃত। দৈনিক বাংলার বাণী, ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বিনোদন ম্যাগাজিন ‘সিনেমা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুজিববাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন।
শেখ মনি ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। এরপর তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন ১৯৫৮ সালে। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বি এ ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ মনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং ১৯৬৩ সালে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত সব আন্দোলন-সংগ্রামে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা একটি নাম শেখ ফজলুল হক মনি। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা পালন করেন শেখ মনি। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপী হরতাল সফল করে তোলার ভূমিকায় ছিলেন শেখ মনি। ছয় দফা আন্দোলনে এই অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়ে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয় এবং তিনি কারারুদ্ধ হন। দীর্ঘ কারাবাস শেষে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর তিনি মুক্তি পান। ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করলে দেশমাতৃকার টানে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন শেখ মনি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশের মুক্তিকামী যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন মুজিব বাহিনী। তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর অধিনায়ক।
শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তিনি মনেপ্রাণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি সুন্দর সমাজব্যবস্থা গঠন করতে চেয়েছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন স্বাধীনতা-পরবর্তী অস্থির যুবসমাজকে সৃজনশীল খাতে প্রবাহিত করতে। যার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছিল যুবলীগ, সেই শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ এখন যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ মনির ছোট ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।
শেখ ফজলুল হক মনির জন্মদিন উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যুবলীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ রবিবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহিদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ ১৫ই আগস্টে নিহত সব শহিদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও মোনাজাত। আগামীকাল সোমবার ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে অসহায়-দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। এছাড়া আগামী ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ শেখ ফজলুল হক মনির ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী সব মসজিদে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনাসভা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অসহায়, এতিম ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে।