গায়ে হলুদ, হাতে মেহেদী পড়ে বধুর সাজে বসেছিল স্কুল ছাত্রী ফাহিমা। বাড়িতে আসবে বরযাত্রী । চলছে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার সহ ৩’শ লোকর দাওয়াত ছিল কনের বাড়িতে। সকল মেহমান গন যথাসময়ে ওই বাড়িতে মধাহ্ন ভোজ করেন। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। তবু রব যাত্রীর পা পরেনি কনের বাড়িতে। রাত আটটারদিকে জানাযায় বর সহ পরিবারের সকলেই বাড়ি তালা বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। গত সাত দিন ধরে বরের পরিবার পলাতক রয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ডালেশ্বর গ্রামে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। গত ৭দিন ধরে বর সহ পরিবার পলাতক রয়েছে।
অভিযুক্ত বর উপজেলার সাতখামাইর গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. আকেব আহনাব @মুফরাদ। সে বরমী ডিগ্রী কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্য অভিযুক্তরা হলো বরের পিতা মো. জাহাঙ্গীর আলম,মা মোছা. মাকসুদা বেগম,বড় ভাই মো.মীম ও একই গ্রামের মৃত মো. মতিনের ছেলে জুয়েল। ভূক্তভোগী ছাত্রী মোছা. ফাহিমা উপজেলার একই ইউনিয়নের ডালেশ্বর গ্রামের মো. আলম মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় সাতখামাইর উচ্চবিদ্যালয়ের আসন্ন এস.এস.সি পরীক্ষার্থী।
ভূক্তভোগী ছাত্রী জানান, মুফরাদ তার সাথে প্রায় দেড় বছর যাবৎ গোপনে গ্রেম করেছে। মুফরাদ তাকে পালিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সরল বিষ¦াসে প্রেমিকের হাত ধরে বাড়িও ছাড়ে সে। গত ২মে নোটারী পাবলিক এবং ৬ মে রেজিষ্ট্রি কাবিন মূলে দশ লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে মুফরাদ তাকে বিয়ে করে । মুফরাদের পরিবার এলাকার প্রভাবশালী। তারা এ বিয়ে মেনেনিতে পারেনি। তাই মুফরাদ তাকে নিয়ে স্ত্রীর পরিচয়ে অন্যত্র অবস্থান করে।
ওই ছাত্রী অভিযোগ করে আরো বলেন, মুফরাদের বাবা-মা প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে তাকে পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করেনেয়ার প্রস্তাব দেয় । ছাত্রীর পরিবার সরল বিস্বাসে ওই প্রস্তাবে রাজী হয়। দু’পরিবারের মধ্যে সমোজতা হয় ফাহিমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে পুত্রবধু হিসেবে তুলে নিবে মুফরাদের পরিবার। চেয়ারম্যান ফাহিমাকে পাঠিয়েদেন বাবার বাড়িতে।
২৩জুন মেয়েকে তুলে দিতে চেয়ারম্যান মেম্বার সহ দুই শতাধিক লোকের মধ্যাহ্ন ভোজের দাওয়াত দেন ফাহিমার বাবা। বাড়িতে চলে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। গায়ে হলুদ মেহেদী হাতে বধু সেজে অপেক্ষা করে ফাহিমা। দাওয়াতের মেহমান গন যথাসময়ে উপস্থিত হন মধাহ্ন ভোজে।
সকলেই অপেক্ষায় ছিলো আসবে বরযাত্রী। ফাহিমা স্ব-সম্মানে যাবে শশুর বাড়ি। তার পরই হয় বিধি বাম। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। কনের বাড়িতে পা পরেনি বর পক্ষের। রাত আটটার দিকে ফাহিমার বাবা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ঘরে তালা দিয়ে বর সহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেছে। গত ৭দিন ধরে অভিযুক্ত বর মুফরাদ ও তার বাবা-মা লাতক রয়েছেন।
ওই ছাত্রীর বাবা আলম মিয়া অভিযোগ করে বলেন,কি অপরাধ ছিলো আমার মেয়ের? প্রভাবশালী মুফাদের পরিবার আমার সাথে সমোজতার নাটক করেছে। মুফরাদের বাবা-মা বৌ তুলে নিতে না এসে ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে তালা বন্ধ করে পালিয়ে গেছেন। মেয়েকে তুলে দেয়ার জন্য ধার দেনা করে প্রায় তিণ লাখ টাকা খরচ করি। গরু,খাসি জবাই করে তিন শতাধিক লোকের খাবারের আয়োজন করি। মুফরাদের বাবা জাহাঙ্গীর আলম এখন বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করলেও আমার মেয়েকে বৌ করে তুলে নিবেনা। আমি এর বিচার বাই।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে মুফরাদের বাড়িতে তালা বন্ধ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশীরা তাদের অবস্থান বলতে পারেনি। অভিযুক্ত মুফরাদ ও তার বাবা জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। মুফরাদের বড় ভাই মীম এবং তার মা মাসুদা বেঘমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। য়েকারণে অভিযুক্তদের বত্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, অভিযুক্ত মুফরাদ প্রেম করে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেছে। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। ছেলের পরিবার ফাহিমাকে পুত্রবধূ হিসেবে তুলে নিতে রাজী হয়। মেয়ের বাবা বাড়িতে মেয়েকে তুলে দিতে ৩’শ লোকের খাবারের অযোজন করে। মুফরাদের বাবা-মা প্রতারণা করে পুত্র বধুকে তুলে না নিয়ে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি তালা বন্ধকরে পালাতক রয়েছেন।
অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আর্শাদ মিয়া জানান, অভিযোগের তদন্ত চলছে। বাড়িতে গিয়ে কাওকে পাওয়া যায়নি। বাড়ি তালাবন্ধ করে সকলেই পলাতক রয়েছেন। এ ব্যপারে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে।