
১৩৮তম বন্দর দিবস উপলক্ষে সাংবাদিক সাথে মত বিনিময় সভা।
রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৩৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সম্মানিত প্রতিনিধিগণ, চট্টগ্রাম বন্দরের সম্মানিত সদস্যগণ, উপস্থিত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং সুধীমন্ডলী আস্ সালামু আলাইকুম ও শুভ মধ্যাহ্ন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ শুভক্ষণে বন্দরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আপনারা জানেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাগৈতিহাসিক বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ হতে খ্রীস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে চট্টগ্রাম হতে সমুদ্রপাড়ির কথা জানা যায়। পরবর্তীতে আরব ও ইয়েমেনী বণিকরা এবং তারপর ক্রমান্বয়ে চাইনিজ, পর্তুগীজ, ডাচ ও ব্রিটিশরাও এই বন্দর ব্যবহার করেছে। তৎকালীন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়া সরকার ১৮৮৭ সালে পোর্ট কমিশনার্স এ্যাক্ট প্রণয়ন করে যা ২৫ এপ্রিল ১৮৮৮ সালে কার্যকর হয়। বস্তুতঃ তখন থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তাই প্রতি বছর ২৫ এপ্রিল “বন্দর দিবস” হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।
প্রিয় সূধী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদদের আত্মত্যাগ এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়ে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি নবজন্ম লাভ করেছে। আমি সালাম জানাই জেন-জি কে তাদের দেশ প্রেম, সাহস, আত্মত্যাগ ও দুরদর্শিতার জন্য। জেন-জি’র বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতিষ্টা দিবস অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল “বন্দর দিবস” বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। রীতি অনুযায়ী এ দিবসের প্রাক্কালে সাংবাদিক বন্ধুদের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ঐতিহাসিক সংস্থার প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর গত প্রায় নয় মাস সময় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আপনারা আমাকে যে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তার জন্য আমি আপনাদের আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
উপস্থিত সুধী
কোভিড অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর তেমন প্রভাব ফেলে নি, বরং কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে এবং রপ্তানী আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, মার্চ ২০২৫ এ রপ্তানী আয়ে মার্চ ২০২৪ এর চেয়ে ১৯৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৭১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
সুধী মন্ডলী,
চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিক পোর্ট ইকোসিস্টেম, পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম প্রবর্তন, ডিজিটালাইজেশন এবং আধুনিকীকরণের মাধ্যমে একটি বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারী পত্র ও নথি আদান প্রদান সহজে ও দ্রুত সম্পাদনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের শতকরা ৮০ ভাগ কাজ ডি-নথি পদ্ধতিতে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডি-নথির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। CPA Automation Project এর আওতায় ট্রেনিং Automation সিস্টেম সম্পূর্ণ রূপে চালু করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগের সামগ্রিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ASYCUDA, TOS এবং বায়োমেট্রিক ডাটা সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের Fixed Assets Valuation প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বন্দরের পেনশনভোগীদের পেনশন নথিসমূহ ডিজিটাল আর্কাইভ করে সংরক্ষণ করা সংক্রান্ত কাজটি চালু করা হয়েছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারি ক্রয় সম্পাদনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সকল ক্রয় কাজ e-GP তে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দরপত্র
প্রক্রিয়া যাতে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক এবং বৈষম্যহীন হয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। টার্মিনাল অপারেটর এবং বার্থ অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে PPA2006, PPR 2008 এবং প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ অনুসরণে ওটিএম পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ লক্ষে বিদ্যমান বিধি-বিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রিয় সুধী
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কন্টেইনার ইয়ার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং নতুন নতুন কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগত রাসায়নিক পদার্থ সমূহকে নিরাপদে সংরক্ষণ ও ছাড়করণের লক্ষ্যে দ্বিতল বিশিষ্ট ৪২৭৫ বর্গমিটার আয়তনের একটি ক্যামিকেল শেড নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে নদীর উভয় পাড়ে ২৮৫০ মিটার Revetment/Bank Protection কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে কোন ইক্যুইপমেন্ট স্বল্পতা নাই। তথাপিও চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য ১২টি ২০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল ক্রেন সংগ্রহ করা হয়েছে। এলসি খোলা হয়েছে ০২টি হেডী ট্রাক্টর, ০২টি লো বেড ট্রেইলার। এলসি খোলার প্রক্রিয়াধীন ০১টি ম্যাটেরিয়াল/ মাল্টি হ্যান্ডলার। চবক পোর্ট লিমিট এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে কাজের জন্য ১২টি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন জাহাজ ক্রয় করা হবে। উক্ত ইক্যুইপমেন্টসমূহ সংগ্রহের ফলে বন্দরের সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
স্মানিত
অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬৩ শতাংশ বেশি (সত্র-ইপিবি এর ওয়েবসাইট)। এ রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ (৮৫ শতাংশ) রপ্তানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হ্যান্ডলিং হয়েছে।
সম্মানিত সুধী
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের Average Waiting Time উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। বর্তমানে কন্টেইনার জাহাজ বহিঃনোঙ্গরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, ক্ষেত্রবিশেষে অন-এ্যারাইভ্যাল জেটিতে ভিড়ছে। আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যে পরিমান কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় তা মূলত বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীন চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিফলন। চট্টগ্রাম বন্দরের এই ধারাবাহিক কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সামগ্রীক অর্থনীতির চিত্র পরিস্ফুটিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ২০২৩-২০২৪ এর একই সময়ের তুলনায় ৫.০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লক্ষ ১৩ হাজার ১শত ৬১ মেট্রিক টন যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৯৬ শতাংশ বেশি। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ৯ মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩০৫৮টি। এতে বুঝা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি শত প্রতিকূলতার মাঝেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। DDLED
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের কার্যক্রমের সাথে সহায়ক অন্যান্য সংস্থা/এজেন্সী যেমন শুল্ক বিভাগ, ব্যাংক, শিপিং এজেন্টগণ আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ২৪x৭ কার্যক্রম সম্পাদন করছে। তাছাড়া, চট্টগ্রাম কাষ্টমস এর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরবচ্ছিন্ন কর্মতৎপরতা ও দক্ষতা।
প্রিয় সুধী
বন্দর কর্তৃপক্ষের সংরক্ষিত এলাকার অভ্যন্তরে ডেলিভারি না যাওয়ায় শেড ও ইয়ার্ডে লোহার বক্স ও রাসায়নিক পণ্য এবং কন্টেইনার দীর্ঘদিন পড়েছিল। এই জাতীয় পণ্য সমূহ বন্দরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এ পর্যন্ত ৩৬৭ বক্স-৬১৭ টিইইউএস কন্টেইনার ধ্বংস করা হয় এবং ৩৫৭ বক্স = ৬৪০ টিইইউএস কন্টেইনার অপসারণ করা হয়। এছাড়াও গত ২৪.১২.২০২৪ ইং তারিখে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ডঃ এম সাখাওয়াত হোসেন মহোদয় চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করেন। তাঁর নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে পি শেডের মাঠ থেকে নিলাম যোগ্য ৩০৪ টি গাড়ী রিমোভ করা হয়। উক্ত গাড়ী সমূহ শুল্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রিসিভ করা হয়েছে। গাড়ীগুলো বর্তমানে বন্দরের বহুতল কার শেডে রয়েছে। কাস্টমস কর্তৃক গাড়িসমূহ নিলামের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত স্থানে ইয়ার্ড নির্মাণ করে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।