জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ছেলে ও ভাতিজার পরিকল্পনায় ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাজীপুরের সদস্যরা।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ময়মনসিংহের পাগলা থানার কোকসাইর এলাকার কেরামত আলীর ছেলে মোঃ আলম (৩৮) একই জেলার ত্রিশাল উপজেলার কুষ্টিয়া এলাকার মোঃ আবু কালামের ছেলে মোঃ আরাফাত (২৬)। সোমবার রাত দেড়টার দিকে ময়মনসিংহের পাগলা থানাধীন কোকসাইর এলাকা থেকে মোঃ আলমকে এবং মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন কেওয়া এলাকা হতে মোঃ আরাফাত কে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম জানান, ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর ঘটনার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গিয়াস উদ্দিন (৬০) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি পশ্চিম পাড়া নতুন বাজার গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি তার বাড়ীর সামনে রাস্তার পাশে অটোরিক্সার চার্জসহ দৈনিক গ্যারেজ ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে গ্যারেজে গাড়ি রাখতো এবং অটোরিক্সা তৈরিসহ ক্রয়-বিক্রয় করতেন। গিয়াস উদ্দিন গ্যারেজের ভিতর একপাশে কাঠের চৌকির উপর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতো। প্রতিদিনের মতো ঘটনার দিন ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন ওই গ্যারেজে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ১২ ডিসেম্বর সকালে গ্যারেজের ভিতরে ঘুমিয়ে থাকা কাঠের চৌকির উপর ভিকটিম গিয়াস উদ্দিনকে মাথায় রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মোঃ অলিউল্লাহ বাদী হয়ে ওই দিনই শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানা পুলিশ তদন্ত করার পর মামলাটি গাজীপুর পিবিআই তদন্তভার গ্রহণ করে। দীর্ঘসময় তদন্ত করে মোঃ আলম ও আরাফাত সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পিবিআই। পরে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গিয়াস উদ্দিনের গ্যারেজে অটোরিক্সা রাখতো গ্রেফতারকৃত মোঃ আলম ও আরাফাত। ঘটনার রাতে গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আবুজর (৩২) ও ভাই মোঃ সিরাজের ছেলে ভাতিজা সবুজ (৩২) এর সাথে গিয়াস উদ্দিনের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মোঃ সাহাবুদ্দিনদের বিরোধ রয়েছে। সাহাবুদ্দিনদের ফাঁসাতে গ্রেফতারকৃতরা আবুজর ও সবুজের পরামর্শে গিয়াস উদ্দিনকে ফাঁসানোর জন্য হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন গ্রেফতার আলমকে ফোন কলে ডেকে এনে আবুজর, সবুজ, আরাফাতসহ অন্যরা ঘটনাস্থলের পাশের দোকানে বসে চা পান করে। পরে সকলে একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্যারেজে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম গিয়াস উদ্দিনের মাথায় ধাঁরালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। মূলত ভিকটিম এর ছেলে আবুজর এবং ভাতিজা সবুজ তাদের সহযোগিদের সাথে পরিকল্পনা করে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিমকে কুপিয়ে হত্যা করে। পিবিআই এর হেফাজতে থাকা অবস্থায় গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ আলম ও মোঃ আরাফাত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। পরে তাদের মঙ্গলবার গাজীপুর আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামিদের নাম প্রকাশ করে গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।