
গোপাল হালদার, পটুয়াখালী:–পটুয়াখালী শহরের বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় অনেক দোকানে তেল মিলছে না, আর যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোতে গায়ে লেখা দামের চেয়ে ১০-২০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে হেতালিয়া বাধঘাট, পুরান বাজার, নতুন বাজার, পৌর নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শহরের মুদি দোকানের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু কিছু দোকানে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় মাস ধরে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত ডিসেম্বরেও এক দফা সরবরাহ কমিয়ে লিটারপ্রতি ৮ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। এবারও আসন্ন রমজানের আগে একই কৌশলে তেলের সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা।
পটুয়াখালীর শহরের চৌরাস্তার বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রেতা আরিফ সিকদার বলেন, “কোম্পানিগুলো ঠিকঠাক তেল দিচ্ছে না। মাঝে মাঝে দু-এক কার্টন তেল দিচ্ছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।”
বসুন্ধরা গ্রুপের পটুয়াখালীর শহরের এসআর মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বিগত তিন মাস ধরে তাদের তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক কর্মীও চাকরি হারিয়েছেন। কিছু ডিলারের কাছে তেল থাকলেও তা নির্দিষ্ট কিছু পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে, খুচরা বাজারের জন্য নয়।
পুরান বাজারের এক ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কোম্পানিগুলো রমজানের আগে আরেক দফা দাম বাড়াতে চায়। তাই তারা বাজারে সরবরাহ কমিয়েছে, আবার কিছু ব্যবসায়ীও তেল মজুত করছেন। রমজানে তেলের দাম বাড়বে এটি এখন ওপেন সিক্রেট।”
সরকার ইতোমধ্যে তেল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে, এতে প্রতি কেজি ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক ১০ থেকে ১১ টাকা কমেছে। এরপরও বাজারে আমদানি বাড়েনি; বরং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোম্পানিগুলো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খুচরা আরেক বিক্রেতা রাজিব ঘোষ বলেন, “বাজারে এক, দুই ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই বললেই চলে। পরিবেশকদের কাছে বারবার তাগাদা দিয়েও তেল পাচ্ছি না। কোম্পানিগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে।”
এ বিষয়ে সরবরাহকারী একাধিক কোম্পানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তীব্র সংকটের কারণে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের বিক্রি বেড়েছে। কিছু দোকানদার শুধুমাত্র তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য তেল সংরক্ষণ করছেন, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আরও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে ক্রেতা আল আমিন হাওলাদার বলেন, তেল না পাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। তারা দ্রুত বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহ সোয়েব মিয়া এ বিষয়ে বলেন, “বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রির অভিযোগ পেলেই সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভোক্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি কেউ অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির অভিযোগ পেয়ে থাকেন, তাহলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে সরাসরি অভিযোগ জানানোর অনুরোধ করছি।”
#