গাজীপুরের কালিয়াকৈরে টাকা না পেয়ে এক স্কুল শিক্ষিকাকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে পাষবিক নিযার্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তার স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ও ননদের বিরুদ্ধে এ নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।নির্যাতিতা শিক্ষিকা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার কোটবাড়ি এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে নার্গিস আক্তার। তিনি উপজেলার নামাশুলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
অভিযোগ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছর আগে কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর এলাকার ছানোয়ার হোসেনের ছেলে পারভেজ রানার সাথে পারিবারিকভাবে নার্গিস আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে এক বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামী পারভেজ তার স্ত্রী নার্গিসের কাছে বিভিন্ন সময় টাকা-পয়সা দাবি করে আসছে। ওই চাহিদা মত টাকা না দেওয়ায় স্বামী পারভেজ, শ্বশুর ছানোয়ার হোসেন, পারভিন বেগম ও ননদ সম্পা আক্তার ক্ষিপ্ত হন। এর জেরে তার স্বামী, ননদ ও শ্বশুর-শাশুড়ি বিভিন্ন সময় তাকে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার রাতে স্বামী পারভেজ তার স্ত্রী নার্গিসকে লাঠি দিয়ে এলোপাথারি মারধর করে। ব্যথায় কাতর ওই শিক্ষিকা ডাক-চিৎকার করলেও তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে ঘরের ভিতরে আটকে রাখেন পাষন্ড স্বামী পারভেজ। এ সময় তিনি একাধিবার ৯৯৯-এ ফোন ব্যস্ত দেখালে তার স্কুলের সহকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে তার সহকর্মীরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে ওই স্কুলসহ আশ-পাশের শিক্ষকরা স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরে তারা ওই শিক্ষিকার চিকিৎসার জন্য তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকা বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
আহত শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার ও তার সহকর্মীরা জানান, স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির চাহিদা মতো টাকা না দেওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় নির্যাতন করে। শুক্রবার রাতেও ঘরের ভিতর আটকে তাকে পাষবিক নির্যাতন চালানো হয়।
অভিযুক্ত স্বামী পারভেজ রানা মুঠোফোনে জানান, বিভিন্ন কথাবাতার্য় আমাকে উত্তেজিত করে তোলতে তাকে একটু মারধর করেছি। এটাকে সে বড় করে তোলতেছে। তবে কোনো টাকা পয়সার বিষয় নয়।
অভিযুক্ত শ্বশুর ছানোয়ার হোসেন জানান, মেয়ে মাস্টার থাকায় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছিলাম একটু আশায় সে সংসার চালাবে। কিন্তু সে বেতনের টাকা দেয় না। তাই একটাএকটু ঝগড়াবিবাদ হতো। ওইদিন ছেলে তার বউকে একটু মারধর করেছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এমন ঘটনা সব সংসারে ঘটে।
কালিয়াকৈর থানার ডিউটি অফিসার (এসআই) মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, এ ঘটনায় নির্যাতিতা শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার রমিতা ইসলাম জানান, ওই শিক্ষিকাকে নির্যাতনের পর আটকে রাখার খবর পেয়ে শিক্ষকদের সেখানে পাঠানো হয়। শিক্ষকরা ওই শিক্ষিকার স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।