বিশেষ প্রতিনিধি :
‘স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্রেডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে সরকারি, বেসরকারি, এনজিওসহ সকলকে একযোগে কাজ করার বিকল্প নাই। এলক্ষ্যে বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এক্সেলারেটিং ব্রেডেড এডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক কনসালটেশন এর আয়োজন করা হয়।
২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ব্রেডেড এডুকেশনাল
মাস্টার প্ল্যান (২০২২-২০৩১) তুলে ধরেন এবং সেখানে বাংলাদেশে একটি এডুকেশন এক্সিলারেটর গঠনের কথা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগে এবং বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি এক্সিলারেটর গঠন করা হয়। এডুকেশন এক্সিলারেটর এর চারজন কো-চেয়ার হলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি, এনজিও প্রতিনিধি হিসেবে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক জনাব আসিফ সালেহ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন জনাৰ ৰুবানা হক।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব সোলেমান খান। অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড জনাব তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর জনাব আনীর চৌধুরী।
এসময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্লেন্ডেড শিক্ষা উপযোগী করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কী কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন তার ওপরে একটি আলোচনা হয়।
প্যানেলিস্ট হিসেবে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জনাব মোঃ সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব)
জনাব নাসরীন আফরোজ এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের লিড জনাব তানিয়া মিলবার্গ।
বিগত এক দশকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কন্টেন্ট তৈরি, বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করতে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। কোভিডকালীন সময়ে পুরো বিশ্বের ন্যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও
চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস নেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিওসহ বিভিন্ন
শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন অফলাইন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়। কোভিত পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও
মিশ্রণে ব্রেডেড শিক্ষার পদ্ধতির নীতি প্রণয়ন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণলায়ের নেতৃত্বে মোট ১৩টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে ব্রেডেড শিক্ষা ও দক্ষতা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মোকাবেলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরের উপযোগী করে তোলার জন্য সচেতনতা তৈরি করা এই কন্সালটেশনের অন্যতম লক্ষ্য। ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতিকে উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে দেশে
প্রযুক্তিনির্ভর, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করে ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি’র সহায়তায় পরিচালিত এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও এসপায়ার টু ইনোভেট-এটুআই এর
সহযোগিতায় আয়োজিত এই ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক।
এছাড়াও এসময় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) জনাব নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব ফরিদ আহাম্মদ,এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জনাব ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক জনাব প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজম, এবং ইডুকেশন ফোরডটজিরো বিভাগের বিশেষজ্ঞ ওস্তাপ লাতসিশিনসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে এখন ব্রেডেড শিক্ষা পদ্ধতির বিকল্প নাই। আধুনিক প্রযুক্তিকে সবার জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করা দেশের জন্য
একটি এখন বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন কারিকুলামে তাই সমস্যা সমাধান ভিত্তিক শিখন ও কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের সাথে আইসিটি বিভাগ শিক্ষাঘাতে আইসিটি অবকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পের ‘শিক্ষক বাতায়ন’ প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে দেশের ছয় লাখ শিক্ষক ডিজিটাল কনটেন্ট দিয়ে চলেছেন। দেশব্যাপী স্কুলগুলোতে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ নির্মাণ করা হয়েছে, তৈরি করা
হয়েছে ২০ হাজারের অধিক ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’, অনলাইনভিত্তিক কিশোর বাতায়ন প্ল্যাটফর্ম ‘কানেক্ট’ এর মাধ্যমে দেশের ৩০ লাখ কিশোরকে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং জাতীয় ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে ২২ লাখ শিক্ষার্থীকে সংযুক্ত করা হয়েছে যেখানে প্রায় পাঁচ লাখেরও অধিক ডিজিটাল কনটেন্ট রয়েছে। এছাড়াও অন্তর্ভুক্তিমূলক
শিক্ষাব্যবস্থা তৈরিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বুক তৈরিসহ নানান উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।