বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে প্রতিবছর বাজেট বাড়ছে কিন্তু শিক্ষা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়েনি। এ জন্য কমপক্ষে বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত ‘এডুকেশন বাজেট : আওয়ার এক্সপেক্টেশন। শিক্ষা, জেন্ডার সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট : অংশীজনের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় এ দাবি জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি মালালা ফান্ড অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ফর সোশাল অ্যাকাউন্টেবলিটির সহায়তায় আয়োজন করে ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন।
সভায় ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদাকে চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষায় বাজেট আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। বাজেটে টাকার অঙ্ক বাড়ে কিন্তু শিক্ষার্থীর প্রতি বিনিয়োগ বাড়ে না। শিক্ষার সবচেয়ে বড় অংশীজন শিক্ষার্থীরা।’
অনুষ্ঠানে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর কে এম এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় আমরা আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। এ জন্য আমাদের কোথায় কাজ করতে হবে সেটা চিন্তা করতে হবে।’
জাতীয় বাজেটে বাড়ার সাথে সাথে ও শিক্ষায় ব্যয় কী রকম বেড়েছে তার একটি গ্রাফ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি যেভাবে বড় হয়েছে সে তুলনায় শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ছে না। এই জায়গাতেই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। জাতীয় আয়ের ৪-৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া এবং জাতীয় বাজেটের ১৫-২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু আমরা বাস্তবে দুটি ক্ষেত্রেই নিচের দিকে আছি। বাজেটের আকারে ১২ শতাংশ এবং জাতীয় আয়ে এটা ২ শতাংশের কাছাকাছি। তার মানে আমরা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। এ জন্য শিক্ষায় বাজেট বাড়ানো দরকার।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘টাকা খরচ করতে পারব আমরা। কিন্তু আগে দেখতে হবে টাকাটা কোথায় খরচ করছি। ওই টাকা-পয়সা প্রপারলি খরচ করতে পারছি না। আমাদের দেশে অনেক টাকা আছে। আমাদের অর্থনীতি অনেক বড় আউপুট দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই। আরো বড় করার ক্ষমতা আছে। টাকা আমরা আনতেও পারি।’
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মন্ত্রীর কাছে তাদের দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির টাকা পায় না জানালে মন্ত্রী তখন কেন সবাই টাকা পায় না সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন এবং সরকার আবার মিড ডে মিল চালু করার কথা ভাবছে বলে জানান। একই সাথে হাওরে আর বাঁধ নির্মাণ বা অল ওয়েদার রোড নির্মাণ করা হবে না বলেও জানান মন্ত্রী।
বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটস অধ্যাপক ড. মানজুর আহমেদ বলেন, ‘আমরা গত ১০ বছর ধরে বলে আসছি শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। দুই মন্ত্রণালয়ের টানাপড়েনে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাতে আমরা পারলাম না।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও পিকেএসএসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত প্রমুখ।