বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে আগ্রহী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে সফরত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে বলেছেন, উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট।
মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে রাজধানীর গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করে ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। নৈশভোজ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমানকে।
সালমান এফ রহমান বলেন, র্যাবের স্যাংশন নিয়ে আমরা কথা বলেছি। লু জানিয়েছেন এটা তাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের ব্যাপার। ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। লু আমাদের জানিয়েছেন তারাও সিজ ফায়ার (যুদ্ধবিরতি) চায়। শীঘ্রই এ বিষয়ে সমাধান আসবে।
তিনি বলেন, উনারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো করতে চান। অনেকগুলো খাতে উনারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চান। আমরা উনাদের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছি। আমরা উনাদের বলেছি আমরাও এটা চাই। নির্বাচনের আগে উনাদের সঙ্গে আমাদের যে একটা ভুল বুঝাবুঝি ছিল এ বিষয় নিয়ে বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি। এ বিষয়ে কোনও কথা উনারাও তুলেননি আমরাও তুলিনি। দুই পক্ষই চাচ্ছি সম্পর্কটা যেন ভালো হয়। ডোনাল্ড লু ইংরেজিতে বলেছেন উই ওয়ান্ট টু রিবিল্ড দ্য ট্রাস্ট।
দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে ট্রাস্ট ডেফিসিট ছিল কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি (ডোনাল্ড লু) একটা কথা বলেছেন, আমরা তাকে বলেছি- ইয়েস, আমরাও এটা চাই। আমি তো উনাকে জিজ্ঞেস করবো না, কেন আপনি মনে করেন কোনও ট্রাস্ট ডেফিসিট আছে কিনা। আমরা জানি ইলেকশনের সময় উনাদের একটা রিজারভেশন ছিল। কিন্তু ইলেকশন পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি বাইডেনের চিঠির পর আমরা মেনে নিয়েছি তারা ইলেকশন মেনে নিয়েছেন এবং সরকারকেও মেনে নিয়েছেন। চিঠিটা একটি পজিটিভ চিঠি ছিল। তারপর থেকে উনাদের সঙ্গে আমাদের এনগেজমেন্ট শুরু হয়ে যায়।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা হয়েছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা বিদ্যুৎ খাতে কাজ করতে চায়। ভুটান, নেপাল, ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তারা আঞ্চলিক বিদ্যুৎখাতে কাজ করতে চায়। বিদ্যুৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে চায়। আমরা যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি সেজন্য তারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তারা যে সহযোগিতা করে আসছে তারা সেটা করতে থাকবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে বলেছি, তারা যেন মায়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে। তবে মায়ানমারের বর্তমান অবস্থা দেখে তারা বলেছেন, এ বিষয়ে আরো সময় লাগবে, তবে আমরা কাজ করছি। শ্রমনীতি ও আইন নিয়ে কথা হয়েছে। তারা চায় এ বিষয়ে আমরা যেন আইএলও এর সঙ্গে কাজ করি।
র্যাবের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠানোর বিষয়ে কোনও ধরনের আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় র্যাবের নিষেধাজ্ঞা ও বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছে এটা তাদের বিচার বিভাগের বিষয়। তারা বলেছে তাদের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তবে তাদের স্টেট বিভাগের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগকে বলা হয়েছে র্যাবের অনেক উন্নতি হয়েছে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া উচিত। তাদের একটা প্রসেস আছে, সেই প্রসেস সম্পূর্ণ হওয়ার পরই এ বিষয়ে অগ্রগতি হবে তারা বলেছে।
ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কোনও কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারাও কোনো কথা বলেনি আমরাও কোনো কথা বলিনি। আমার তো মনে হয় তাদের এখন বিএনপিকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেছেন, তারা বলেছে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বৃদ্ধি করতে চায়। তারা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। তবে সমুদ্রের কোনও ব্লক নিয়ে কথা হয়নি।
ডলার সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী এ উপদেষ্টা বলেন, ডলার সংকট নিয়ে তারা বলেছে, তাদের আমেরিকান কোম্পানিগুলো যারা বাংলাদেশে কাজ করছে তাদের পেমেন্ট পেতে সমস্যা হচ্ছে। তারা বলেছে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর পেমেন্ট পেতে দেরি হচ্ছে। তারা এও বলেছে আমরা বুঝি আপনাদের অর্থনীতি ও রিজার্ভের উপর একটা চাপ আছে। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, এ সমস্যা কত দিনের মধ্যে ঠিক হবে। আমি আশাবাদী ডলারের রিজার্ভ বাড়বে। আমি মনে করি সামনে আমাদের রেমিটেন্সও বাড়বে এবং রপ্তানিও বাড়বে। তবে আমি আমেরিকার প্রতিনিধি দলকে বলেছি আমাদের পেমেন্ট দিতে দেরি হচ্ছে তবে আমরা কন্টিনিউয়াসলি পেমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি।
এসময় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন- বিএনপি, রাজনীতি, হিউম্যান রাইটস নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয় নাই। বাংলাদেশের সঙ্গে তারা কাজ করতে চায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাত ৮টার পর সালমান এফ রহমানের বাসায় যান লু। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো চিফ অব স্টাফ ন্যাথানিয়াল হাফটসহ আরও ৩ কর্মকর্তা। সালমান এফ রহমান ছাড়াও নৈশভোজে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ অনেকে।
রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে নৈশভোজ শেষে সালমান এফ রহমানের বাসা ছাড়েন মার্কিন প্রতিনিধি দল।