বিশেষ প্রতিনিধি :
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, নানা দেশের নানা মত থাকবে, কিন্তু দিনশেষে সবাইকে নিয়ে আমরা একসাথে কাজ করবো। পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বসহ সমগ্র পৃথিবীর বহু দেশ নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর মন্ত্রণালয়ের মিলনায়তনে গণমাধ্যমের সাথে মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, সচিব (সামুদ্রিক বিষয়ক ইউনিট) রিয়াল এডমিরাল (অব:) মোঃ খুরশেদ আলম, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা সভায় যোগ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের বিভক্তি অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ কিন্তু আমরা আমাদের নীতিতে অবিচল আছি এবং থাকবো। বিভিন্ন দেশের নানা মত থাকে কিন্তু দিনশেষে আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পূর্ব-পশ্চিম সমস্ত রাষ্ট্রগুলো আমাদের সরকারের সাথে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে, অভিমত প্রকাশ করেছে। সবাই আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এটিই হচ্ছে শেষ কথা।’
মতবিনিময়ে মন্ত্রী অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে সমস্ত দেশ উচ্চ আয় করে তাদের মধ্যে একটি এবং যারা বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে সেই দেশগুলোর মধ্যে একটি। কোনো কোনো দেশে কিছু সমস্যা আছে আমরা সেগুলোর দিকে আমরা অবশ্যই নজর দেবো যাতে জনশক্তি শুধুমাত্র সংখ্যায় নয়, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। আমাদের যে জনশক্তি বিদেশে কাজ করে সেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোকে উৎসাহিত করা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলগুলোকে অবারিত এবং সহজলভ্য করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকাসহ নতুন জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত করাও আমাদের লক্ষ্য।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি খুব সহসা কূটনৈতিকভাবে এর সমাধান হবে। রোহিঙ্গারা যে শুধু এখন এসেছে তা নয়, দেশ বিভাগের আগে থেকে তারা আসা শুরু করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কয়েক দফা এসেছে। কিছু কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং আশা করি অন্যান্য রাষ্ট্রের সহযোগিতায় এই সমস্যা সহসাই সমাধান হবে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ আছে কি না, এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো চাপ অনুভব করছি না, নির্বাচন নিয়ে বহু চাপ, গভীর, মধ্যম নানা ধরণের চাপ ছিলো, সব চাপ উতরে নির্বাচন হয়ে গেছে। আমরা কারো চাপ অনুভব করছি না। আমরা সবার সাথে একযোগে কাজ করবো।’
ড. হাছান আরো বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত, ওআইসিভুক্ত, সার্কভুক্ত দেশগুলো এবং এর বাইরেও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যবেক্ষকরা এসেছিলো। তারা অকপটে শিকার করেছে এবং প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রীকে নতুন সরকার গঠন করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের শপথ গ্রহণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, ভারত, রাশিয়া, চীন এবং বিভিন্ন দেশের বিপুল সংখ্যক রাষ্ট্রদূতেরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ তারা নতুন সরকারকে সম্ভাষণ জানানোর জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এবং সবাই আমাদের নতুন সরকারের সাথে কাজ করার অভিমত ব্যক্ত করেছে।’
মতবিনিময় শেষে এ দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন ও বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নবনিযুক্ত ড. হাছান মাহমুদকে তার দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকর। রোববার দুপুরে এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় ড. হাছান মাহমুদকে অভিনন্দন। ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী আরো গভীর করতে আমরা এক সাথে কাজের প্রত্যাশা রাখি।’