
নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বাড়াবে বলে দাবি করেছে বিএনপি। এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার বনানীর বাসায় বৃহস্পতিবার বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাজেট হচ্ছে প্যাট্রন ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপ অর্থাৎ পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি, রেনসিংকি অর্থাৎ ভাড়া দিতে হবে, চাঁদা দিতে হবে, কমিশন দিতে হবে। এর মাধ্যমে অর্থনীতি চলতে হবে। অ্যাসট্রাকটিভ ইন্সটিটিউশন মানে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুটপাটের জন্য সংগঠিতভাবে তৈরি করে দিয়েছে, এরাও লুটপাটের অংশীদার হয়ে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণের কষ্ট বাড়ছে, এই বাজেটে আরো বাড়বে।
বাজেটের ঋণ নির্ভরতা প্রসঙ্গ টেনে আমির খসরু বলেন, ঋণ তারা (সরকার) দেশের থেকে, দেশের বাইরে থেকে নিচ্ছে। এই ৭ বছরে ৫২ শতাংশ বাইরে বেড়েছে। তারা দেশের ভেতরে ব্যাংকগুলো থেকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, দেশের বাইরে থেকে যে ঋণ নিচ্ছে এই ঋণের দায় তো আগামী প্রজন্মকে দিতে হবে। তারা ঋণের মাধ্যমে যে লুটপাটের অর্থনীতি সৃষ্টি করেছে, ঋণের মাধ্যমে এই লুটপাটের অর্থনীতির ভিকটিম বাংলাদেশের মানুষ। যে বৈদেশিক ঋণ যেটা ৮/১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ছিল সেটা আজকে এক লক্ষ কোটি টাকায় চলে গেছে।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বাজেট সরকার দিচ্ছে না আইএমএফ দিচ্ছে সেটাও তো দেখার বিষয়। আইএমএফ যে গাইড লাইনগুলো দিচ্ছে তারা তো সুনিশ্চিতভাবে বলেছে, কি কি করতে হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি কি কারণে আজকে নিম্ন পর্যায় এসে নেমেছে। তারা(সরকার) তো বিপদে আছে। আইএমএফের শর্ত না মানলে এদিকে বাজেট সাপোর্ট থাকে না, আইএমএফের শর্ত মানলে তাদের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হয়। এই অবস্থায় সরকার অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছে সেখান থেকে বের হতে হলে এটার রাজনৈতিক সমাধান হতে হবে। রাজনৈতিক সমাধান হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত একটি সংসদ একটি সরকার যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে ও জবাবদিহি থাকবে।
সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু। তিনি বলেন, বাজেট কি? বাজেট হচ্ছে জনগণের চিন্তার প্রতিফলন, বাজেট হচ্ছে রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন। আজকে যেখানে অবৈধ দখলদার সরকার বসে আছে তাদের তো রাজনীতির চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না, তাদের নিজেদের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে, তাদের তো সাধারণ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে না। বাজেট তো বড় বড় অংক দিচ্ছে আর বাংলাদেশের মানুষকে বড় বড় অবকাঠামোর কথা বলছে। বড় বড় অবকাঠামো মধ্যে বড় বড় চুরি, বড় বড় ডাকাতি ছাড়া কিছু দেখছি না, বড় বড় অবকাঠামোর মধ্যে বড় বড় অংকের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। সেজন্য তো দেশে ডলার সংকট দেখা দিয়েছে, সেজন্য আজকে ব্যাংকে টাকা নেই, সেজন্য তো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বেহাল অবস্থা।
আমীর খসরু বলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গত ৩০ বছরে যে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিলাম সেটা এই সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা দলীয় চিন্তার ভিত্তিতে পৃষ্ঠপোষকতার লুটপাটের অর্থনীতির মডেল তৈরি করে এটা করা হয়েছে। আপনি বাজেটের আকারের কথা বলছেন। তারা ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণ নিয়ে তারা ঘি খাচ্ছে। আপনি ঋণ নিয়ে যদি ঘি খান। এই ঋণ তো আপনি পরিশোধ করতে পারবেন না। এই ঘিয়ের টাকা দেশের জনগণকে পরিশোধ করতে হবে।