সিনিয়র রিপোর্টার:
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে রাজউক আয়োজিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অন আরবান আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। বিদ্যমান দুর্বলতাকে কাটিয়ে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ভবনের তদারকির সঙ্গে সঙ্গে নিয়ম চাপিয়ে না দিয়ে জনগণকে ভূমিকম্প, ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
তারা বলেন, দ্রুত নগরায়ন, নির্মাণ নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং নৈতিকতার অভাবজনিত কারণে ঢাকা চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলা শহর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে শহরের উন্মুক্ত বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নির্মাণের মান নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং কোড এবং অন্যান্য স্ট্যান্ডার্ডগুলো মেনে চলার জন্য যে প্রক্রিয়া আবশ্যক বর্তমান বাস্তবতায় তা অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের পরিচালক ড. আবদুল লতিফ হেলালী। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কারিগরি ও দক্ষ জনবল এবং সংগ্রহকৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং ল্যাবরেটরি পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ থেকে দেশের সম্পদ ও জনগণের জান-মালের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে বিপুল সামর্থ্য সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ প্রয়োগ ও পরিচালনা করা প্রয়োজন। উল্লিখিত সামর্থ্য টেকসইভাবে প্রয়োগের জন্য একটি বিশেষায়িত কারিগরি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা আবশ্যক।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন এবং প্রশিক্ষিত জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে বিধায় সরকারের প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও পে-স্কেলে পরিচালনা করা বাস্তব সম্মত নয়। সরকারের সম্পূর্ণ মালিকানায় এবং উপযুক্ত ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ছাড়া স্ব-উপার্জনে টেকসইভাবে পরিচালনার নজির রয়েছে, যেমন: সিইজিআইএস, আইডব্লিউএম, আইআইএফসি, এসইমি ফাউন্ডেশন, বিআইডিএস ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ভূমিকম্প দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে তুরস্কে ইস্তাম্বুল প্রজেক্ট কো-অডিনেশন ইউনিট-ইস্তাম্বুল সেসমিক অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ারনেস প্রোগ্রাম (ইপিসিইউ-আইএসএমইপি), নেপালে ন্যাশনাল সোসাইটি ফর আর্থকোয়েক টেকনোলজি (এনএসইটি) ইন্দোনেশিয়ায়, ইন্দোনেশিয়া সেন্টার ফর হাউজিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট (পিইউএসকেআইএম, যুক্তরাষ্ট্রে পেসিফিক আর্থ ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ সেন্টার, জাপানে বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিআরআই) এবং ইরানে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূমিকম্প দুর্যোগ ঝুঁকির ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হারে কমানোর প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের কোনো সংস্থায় ভবনগুলোর ঝুঁকি নিরূপণ করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রক্রিয়ার কোনো অনুসন্ধান ও পরীক্ষার সুযোগ-সুবিধা নেই। বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি শহর যেমন, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। সুতরাং ওই নগরগুলোতে ভূমিকম্প দুর্যোগ সক্ষমতার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের সুফল পাওয়ার জন্য এর কার্যক্রম শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সমগ্র দেশব্যাপী বিশেষ করে উল্লিখিত বড় বড় শহরগুলোতে পরিচালনা করাই যুক্তিযুক্ত।
বক্তারা বলেন, বর্তমান প্রচলিত নির্মাণ কাজের অনুমতি প্রদানপত্র (সিপি) পদ্ধতিটি যুগপোযুগী এবং প্রকৌশলগত পদ্ধতিতে না হওয়ায় কাঠামো নকশা পরীক্ষা ও ভবন নির্মাণ তদারকি করা সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সিদ্দিকুর রহমান সরকার, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আন্তর্জাতিক দলনেতা ড. এসকে ঘোষ, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কিমিরিও মেগুরো, বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহমদ আনসারী, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ প্রমুখ।