রেজাউল ইসলাম পলাশ,ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি ‘অভিযান’ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দগ্ধ প্রায় ৭৫ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। লে আগুন পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সার্বিক অবস্থা জানতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে ‘এমভি অভিযান-১০’ এ আগুনে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এদিকে এ ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও গৃহায়ন ও গণপ‚র্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ বজলুল হক হারুন এমপি।
এমভি অভিযান লঞ্চটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বরগুনার উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত তিনটার দিকে ঝালকাঠি সংলগ্ন সুগন্ধা নদীতে পৌঁছলে ইঞ্জিন রুম থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তে তা লে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় বেশির ভাগ যাত্রী ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। রুহুল নামের এক যাত্রী জানান, রাত তিনটার দিকে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে। মুহূর্তে লে আগুন ধরে যায়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা নৌকা নিয়ে লে র আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন। ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত ৩টা ২৮ মিনিটে তাদের কাছে অগ্নিকান্ডের খবর আসে। তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
এদিকে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক বিল্লাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদের নামপরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৭০ জনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ স‚ত্রে জানা গেছে, কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন বিভাগ) মো. সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এদিকে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বন্দর) মো. তোফায়েল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র একজন, নৌপরিবহন অধদফতরের একজন, নৌপুলিশ, জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে।