সিনিয়র রিপোর্টার:
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, এমপি বলেন, ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদন করে জনগনের কাছে তুলে দিতে পারলে এ গবেষণা সম্পূর্ণ সফল হবে।
আজ ১৬ মে (মঙ্গলবার) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও এ বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে “বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিন সুতা ও কাপড় পুনরুদ্ধার এবং এখাতে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা” শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন ।
সভায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: আব্দুর রউফ এর সভাপত্বিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান,বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেলসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ ও মসলিন সুতা ও কাপড় পুনরুদ্ধারের গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ এবংবস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, আপনার সকলেই জানেন একসময় এদেশের তৈরী ঢাকাই মসলিনের সারা বিশ্বে কদর ছিলো। বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৭০ বছর পূর্বে এই গৌরবময় ঢাকাই মসলিন হারিয়ে যায়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র নির্দেশে ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য ও বিশ্ববিখ্যাত ব্রান্ড ঢাকাই মসলিন পনরুদ্ধার করে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং এখাত সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের খবর। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি বাংলাদেশের সোনালী ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প প্রণয়নে সদয় নির্দেশনা প্রদান করে জনগনকে বাঙালিত্ব উপহার দিয়েছেন।
মন্ত্রী গবেষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা জানি, মসলিন শাড়ি তৈরীর প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও শ্রমসাধ্য কাজ। একটি মসলিন শাড়ী তৈরী করতে প্রথমে সুতা তৈরী করতে হয় এবং পরে বুনন কাজ চলে। একটি মাঝারি মানের মসলিন শাড়ি তৈরি করতে অনেক সময় লেগে যায়। ফলে শাড়ির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে, বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে মসলিনের স্বকিয়তা ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে এসে ব্যবহার উপযোগি করতে হবে। তবেই এগবেষণা সম্পূর্ণ সফলতা পাবে। এবং এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক খুশি হবেন।
তিনি যোগ করেন, আমরা আমাদের অংশীজনদের সাথে প্রযুক্তি ও গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিনিময় করতে পারি। এটা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হলে, ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনেরর মূল্য কমিয়ে আধুনিক ডিজাইনের ব্যবহার উপযোগি বহুমুখি কাপড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে।
তিনি আশা করেন, ব্যাপক অনুসন্ধান ও গবেষণার মাধ্যমে মসলিনের কাঁচামাল ফুটি কার্পাস খুঁজে বের করা, ফুটি কার্পাসের চাষাবাদ, সুতা উৎপাদন, কারিগরদের দক্ষতা উন্নয়ন করে উন্নতমানের মসলিন উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে মসলিন সূতা তৈরীর তুলার জাত উদঘাটণ এবং তুলা দিয়ে সুতা তৈরীসহ মসলিন শাড়ী তৈরীর প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে। দেশের সাধারণ তাঁতীদের মাঝে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে আমরা রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ স্থাপন করেছি।
তিনি আরো বলেন, মসলিনের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ ও পেটেন্ট অর্জিত হওয়ায় দেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পটি “জনপ্রশাসন পদক, ২০২১” লাভ করেছে। এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আমাদের এ অর্জন বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলার সোনালী ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন আবারও বিশ্ব আলোড়ন জাগাতে সক্ষম হবে।