বিশেষ প্রতিনিধি:
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনে হাত দিয়ে যখন সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তখনই ষড়যন্ত্রকারীদের বুলেটে তাকে প্রাণ দিতে হয়। সেই ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে তখন ষড়যন্ত্রকারীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আজকে এখানে আমরা সমবেত হয়েছি ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে। আজ এটি সম্ভব হয়েছে কারণ আমরা অর্থনৈতিকভাবে সেই সক্ষম অবস্থায় পৌঁছাতে পেরেছি যে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কাজ করতে পারি। মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন এই ধরনের উদ্যোগের ফলে পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সাথে মানুষ সুন্দর পরিবেশে বাঁচার সুযোগ পাবে।
তিনি আজ রাজধানীর গুলশানে একটি অভিজাত হোটেলে ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে এক সমঝোতা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ সময় আজকের দিনটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দক্ষিণাঞ্চলকে রেলপথের মাধ্যমে ঢাকার সাথে যুক্ত করেছেন। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা ব্রিজের মতো প্রকল্পগুলো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমল পরিবর্তন আনবে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার যখন উন্নতি হয় সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়।
সভাপতির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসসির এবং ঢাকা ওয়াসার নিরাপদ ও টেকসই পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই উদ্যোগ দূষণমুক্ত শহর গড়তে সুফল বয়ে আনবে। তবে সবাই শুধু সরকারের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের বাড়িতে অল্প কিছু টাকা খরচ করে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করলে কিন্তু দূষণ রোধ করা সম্ভব। আমরা কিছুদিন আগে একটি সার্ভে করেছি। সেখানে দেখা গেছে বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় ৯৯.৯৯% বাড়িতে সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনা নেই। অথচ বারিধারার জমির দাম ম্যানহাটন শহরের চেয়েও বেশি। গ্রামেও সোকওয়েল ব্যবহার করে প্রত্যেকে নিজস্বভাবে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক গুলশান বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি বানালেও মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করছে না। সুয়ারেজের ব্লাক ওয়াটারের সংযোগ সারফেস ড্রেনে দিয়ে রেখেছে। আমরা ইতিমধ্যে ডিএনসিসির অঞ্চল-০৩ এ জরিপ করেছি। পর্যায়ক্রমে সব অঞ্চলে জরিপ করে এগুলো বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসময় তিনি যার যার ওয়ার্ডে সারফেস ড্রেনে অবৈধভাবে দেওয়া পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ বন্ধ করে দিতে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা চাই একটি সুন্দর শহর, একটি দূষণমুক্ত শহর। আমরা চাই শহরের খালগুলো হবে দূষণমুক্ত। গুলশান বারিধারার লেকে মাছ চাষ করা যায় না। কারণ সুয়ারেজের ব্ল্যাক ওয়াটার খালের পানি দূষিত করে ফেলেছে। অর্থাৎ ড্রেনে পয়ঃবর্জ্যের সংযোগের ফলে খাল দূষিত হচ্ছে এবং খালের দূষিত পানি নদীতে গিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীও দূষিত করছে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘অন সাইট স্যানিটেশন টেকনোলজি বিষয়ে আমরা ডিএনসিসির উদ্যোগে গুলশানে শাহাবুদ্দীন পার্কে দুই দিন ব্যাপী স্যানিটেশন ফেয়ার আয়োজন করেছি। ফেয়ারে দেশি-বিদেশি ২৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রযুক্তি প্রদর্শনী করেছে। চাইলেই খুব অল্প খরচে বাড়িতে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা যায়।’
উল্লেখ্য, অতিথিদের উপস্থিতিতে ডিএনসিসির পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা ওয়াসার পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ কামরুল হাসান এই সমঝোতা স্মারকে সাক্ষর করেন। “Strengthening the Collaboration between DNCC & DWASA to improve Fecal Sludge Management through Piloting on Scheduled Desludging Initiative” শীর্ষক এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় নগরবাসীর বসতবাড়ি হতে শিডিউলড্ ডিস্লাজিং ( scheduled desludging) এর মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাষণের সেবা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। সংগ্রহকৃত বর্জ্য ও দূষিত পানি প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট যা দাশেরকান্দিতে অবস্থিত, সেখানে পরিশোধন ও পরিবেশে ফেরতের উপযুক্ত অবস্থায় নিষ্কাষণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইউনিসেফ এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস্ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ডিএনসিসি ও ঢাকা ওয়াসা এটি বাস্তবায়ন করবে।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, ইউনিসেফ এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং,ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজাসহ ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরবৃন্দ।