মোহাম্মদ আদনান মামুন, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৫ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন সুমাইয়া নামের এক পোশাক শ্রমিক। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর স্বামী পুলিশকে জানান, স্ত্রীকে হত্যার পর তাঁদের ভাড়া বাড়ির নিচে আরসিসি ঢালাই করে চাপা দিয়েছেন। মঙ্গলবার সেই বাড়িতে ৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও সেই লাশ মেলেনি। পরে ওই ভবন মালিককে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি জানান, লাশ বস্তাবন্দী করে নদীতে ফেলে দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদের চালা এলাকায় আব্দুল লতিফের নির্মাণাধীন ভবনে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় স্বামী ও নির্মাণাধীন বাড়ি মালিকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন-স্বামী মো. হানিফ (৪০), বন্ধু জয়নাল আবেদীন (৩৮), আনিছ (৪৩) ও বাড়ির মালিক আব্দুল লতিফ (৫০)। তাঁদের মধ্যে শুধু জয়নাল কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে আজ সোমবার সকালে ওই নারী শ্রমিকের স্বামী মো. হানিফের দেওয়া তথ্যমতে শ্রীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদের চালা এলাকায় আব্দুল লতিফের নির্মাণাধীন ভবনে অভিযান চালানো হয়। ওই নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের নিচতলার পেছনের অংশে আরসিসি ঢালাই ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। সেই বাড়িতেই স্বামীর সঙ্গে ভাড়া থাকতেন সুমাইয়া।
সুমাইয়া (১৯) কিশোরগঞ্জ জেলের ইটনা উপজেলার আমিনগঞ্জ গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার মেয়ে। মা-বাবা কেওয়া গ্রামের জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। সেখানকার স্থানীয় আউটস্পেস নামে এক কারখানায় চাকরি করতেন সুমাইয়া।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কালিয়াকৈর সার্কেল আফজাল হোসেন বলেন, গত ২৫ জুলাই পোশাক শ্রমিক সুমাইয়া গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকার এক আত্মীয়র বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর নিখোঁজ নারী পোশাক শ্রমিকের মা তাসলিমা আক্তার বাদী হয়ে নারী পোশাক শ্রমিকের স্বামী মো. হানিফ ও তাঁর বন্ধু জয়নাল আবেদীনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেন।
থানা-পুলিশের পাশাপাশি র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্প মামলার তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে আসামি জয়নাল আবেদীন এবং স্বামী মো. হানিফকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ক্লাবকে জানায়, র্যাবকে হত্যার পর বেড়াইদেরচালা এলাকায় আব্দুল লতিফের নির্মাণাধীন তিন তলা ভবনের পেছনে একটি স্টোর রুমের নিচে চাপা দিয়ে ঢালাই করে রাখা হয়েছে।
এমন খবরে র্যাব-১ ও পুলিশের সদস্যরা মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বাড়ির ছোট স্টোর রুমের মেঝে ভেঙে মরদেহ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করে লাশের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম বলেন, আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে এই ভবনে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। ভবনের একটি স্টোর রুমে খনন করা হয়েছে। কিন্তু মরদেহের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। মরদেহটি এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে এমন খবর পেয়েছে গ্রেপ্তারকৃতদের মাধ্যমে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, আজকে গ্রেপ্তারের পর বাড়ির মালিক আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, মাটিচাপা দেওয়া দুদিন পর গভীররাতে তিনি চাপা দেওয়া মরদেহটি বস্তাভর্তি করে অটোরিকশা করে নিয়ে বরমী এলাকার বরামা ব্রিজে যান। সেখানে ওপর থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেওয়া হয় মরদেহ। এরপর তাকে নিয়ে বরামা ব্রিজের যে অংশে মরদেহটি নদীতে ফেলা হয় সে অংশ চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামীকাল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হবে।