বিশেষ প্রতিনিধি:
জানাজা ও জুম’আর নামাজ আদায় করতে শুধু ধর্মপ্রাণ মুসলমানই যায় না, সতর্ক ও সচেতন না হলে জানাজা ও জুম’আর নামাজ থেকে খোয়া যেতে পারে আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন এবং IMEI পরিবর্তন করে সেসব ফোন বিক্রি হয়ে যেতে পারে দোকানে।
জানাজা ও জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়া মুসল্লিদের টার্গেট করে মোবাইল চুরি করা এমনই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। বুধবার রাজধানীর চাঁনখার পুল, জুরাইন বিক্রমপুর প্লাজা ও বুড়িগঙ্গা সেতুমার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্কসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদের কাছ থেকে ৩টি ল্যাপটপ, ১টি মনিটর, ১টি রেডমি নোট-১২ প্রোসহ ৭টি মোবাইল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ সামগ্রী ও মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত ১৬টি ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, ওয়াজ মাহফিল এবং মানুষের জানাজার নামাজসহ জনসমাগমস্থল থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। এরপর চোরাই মোবাইল সেটের আইএমইআই পরিবর্তন করে কেনা-বেচা করে থাকে। চক্রটির সদস্যরা অনলাইনের খুঁজতে থাকে ঢাকা ও এর আশপাশের জানাজার ঘোষণা। কোনো জানাজার সন্ধান পাওয়ার পর তারা খোঁজ খবর নিতে থাকে সেখানে কেমন মানুষের সমাগম হতে পারে। এই কাজের কোড নাম দেয় ‘বডিকাজ’। এই কাজ বলতে তারা বুঝায় লাশের কাজ, মানে জানাজার কাজ। জানাজার স্থান নির্ধারণ হওয়ার পর তারা সেখানে পায়জামা, পাঞ্জাবি ও টুপি পরে যায়। সেখানে গিয়ে তারা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। প্রত্যেকটি গ্রুপে তিনজন করে সদস্য থাকে।
এই গ্রুপের সদস্যরা জানাজার ভিড়ের মধ্যে কৌশলে একজনের পকেটে থেকে মোবাইল চুরি করে গ্রুপের দ্বিতীয় সদস্যকে দেয়। দ্বিতীয় সদস্য মোবাইলটি আবার তৃতীয় আরেকজনকে দেয়। মোবাইল হাতে পাওয়ার পর তৃতীয় ব্যক্তি জানাজার স্থান ছেড়ে চলে যায়। পকেট থেকে মোবাইলটি যে চুরি করে নিয়ে আসে তাকে বলা হয় মহাজন। জানাজা ছাড়াও চক্রটির টার্গেট শুক্রবারের জুমার নামাজ।
শুক্রবার যেসব মসজিদে বেশি মানুষ জুমার নামাজ আদায় করতে আসেন, সেসব মসজিদে চক্রটির সদস্যরা তিনজনের গ্রুপ করে অবস্থান নিত। জুমার নামাজের কাতারে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায় তারা। মসজিদের এই চুরিকে তারা ‘মসজিদ কাম’ বলে থাকে। জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে চক্রটির সব থেকে বেশি গ্রুপ সক্রিয় থাকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে।
চক্রের সদস্য বাহার চোরাই মোবাইল গ্রুপগুলো থেকে সংগ্রহ করত। বাহারের একজন মোটরসাইকেল চালক আছে। যে বাহারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রুপগুলো থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে। বাহার পরে মোবাইলগুলো গ্রেপ্তার মাসুদের কাছে পাঠিয়ে দিত। গ্রেপ্তার মাসুদের কাজ হচ্ছে চোরাই মোবাইলগুলো নির্দিষ্ট দোকানে পৌঁছে দেয়া।
তদন্তে এমন তিনটি দোকানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে : জুরাইনের বিক্রমপুর প্লাজার এসআই টেলিকম যার মালিক গ্রেপ্তার সাইফুল, জুরাইনের সেতু মার্কেটের ফয়সাল টেলিকম যার মালিক গ্রেপ্তার ফয়সাল ও যমুনা ফিউচার পার্কের চতুর্থ তলার একটি দোকান যার মালিক গ্রেপ্তার মিল্লাত। এসব দোকানে টেকনিক্যাল ও মোবাইল বিক্রির কাজ চলতো। প্রথমে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে মোবাইলগুলোর প্যাটার্ন লক খোলা হতো। সর্বশেষ মোবাইল থেকে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফ্লাশ দিয়ে বিক্রি করা হতো চোরাই ফোনগুলো।