শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
ওআইভিএস নিয়ে নির্বাচনের মাঠে থাকছে র‌্যাব
/ ৪৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ৩:৩৫ অপরাহ্ন

খন্দকার আল মঈন:

এলিট ফোর্স র‌্যাব দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুরুতর অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে অপরাধীরাও অপরাধ সংঘটনে নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। কিছুদিন আগেও গুরুতর কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে আলামত হিসেবে অপরাধীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য ঘটনাস্থল থেকে উদ্্ঘাটন করা সম্ভব হতো না বিধায় নিকটস্থ র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করতে হতো, যা ছিল অনেকটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এমতাবস্থায় সরকারি বিভিন্ন জাতীয় ডাটাবেইজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তাত্ক্ষণিক প্রবেশাধিকার জরুরি হয়ে পড়ে। এসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সমাধানকল্পে র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক প্রয়োজনীয় হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার ও ডাটাবেজের সমন্বয়ে ২০২১ সালে Onsite Identification & Verification System (OIVS)-এর প্রবর্তন করা হয়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিত করতে এবারই প্রথম বারের মতো র্যাব কর্তৃক ওআইভিএস ব্যবহূত হচ্ছে। ডিভাইসটি দিয়ে কার্যক্রম শুরুর ফলে তাত্ক্ষণিকভাবে যে কোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল ফোন-সদৃশ এই ডিভাইস ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যে কোনো স্থান থেকে পরিচালনা করা সম্ভব। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্তের ক্ষেত্রে এই ডিভাইস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ডিভাইসটির মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরাধীদের ডাটাবেজ ও কারাভোগের ডাটাবেজের তথ্য পাওয়া যায়। এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রবেশ করালে ঐ ব্যক্তির তথ্য অতি সহজেই তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়। এতে করে নিমেষেই জানা সম্ভব হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার কিংবা হত্যাকাণ্ডে জড়িত বা অপরাধমূলক যে কোনো কাজের সঙ্গে ঐ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না। এই ডিভাইসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী শনাক্তই নয়, বিভিন্ন অজ্ঞাতনামা মৃতদেহের পরিচয়ও শনাক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই ডিভাইসের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ডিভাইস দিয়ে ঘটনাস্থল থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট), জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম তারিখ ব্যবহার করে জানা যাচ্ছে ব্যক্তির পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য। এতে অপরাধ তদন্তে আরো গতিশীলতা বেড়েছে।

 

ওআইভিএস ডিভাইসটি র্যাব ফোর্সেসের অফিসারগণ পরিচালনা করে থাকেন। অপতত্পরতামূলক কাজে কেউ যাতে ডিভাইসটি ব্যবহারের সুযোগ না পায়, সেক্ষেত্রে ডিভাইসটির সুরক্ষাব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ডিভাইসটি র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন ও কোম্পানি পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ডিভাইসটি পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে র্যাব কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়েও তথ্য থাকবে ডিভাইসটিতে। এছাড়া পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও পুলিশের ডাটাবেজের তথ্যসহায়তা ওআইভিএস ডিভাইসটির মাধ্যমে পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ডাটাবেজগুলোর তথ্য এই ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

 

ডিভাইসটি ব্যবহারের শুরু থেকেই অপরাধী শনাক্তসহ অজ্ঞাতনামা ভুক্তভোগীর পরিচয় নিশ্চিতে র্যাবের অভূতপূর্ব সাফল্য মিলেছে। এই ডিভাইস ব্যবহার করে ইতিমধ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে দীর্ঘদিন পলাতক থাকা ২০০৫ সালে বাগেরহাটের চাঞ্চল্যকর মনু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হেমায়েত কবিরাজ, কুড়িগ্রামে একই পরিবারের চার জনকে কুপিয়ে হত্যাসহ চারটি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জালাল গাজী, ১৯৯৩ সালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে পিতা-পুত্রকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আরিফ, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে পুলিশ কনস্টেবল বাদল মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন নাথ ঘোষ, ২০০৬ সালে কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি কামাল উদ্দীনসহ ছদ্মবেশে পলাতক থাকা অসংখ্য অপরাধীর আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ব্যবহার করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন পলাতক মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি বাউল মডেল সেলিম ফকির, বহুল আলোচিত বিশ্বজিত্ হত্যা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন এবং বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘদিনের ছদ্মবেশে পলাতক অপরাধীদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এছাড়া ক্লুলেস গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের অজ্ঞাতনামা লাশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিনের খণ্ডিত লাশসহ অসংখ্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির অথবা অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের পর এই ডিভাইস ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর আশুলিয়া থানাধীন শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদীতে ভাসমান অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ উদ্ধারের পর এই প্রযুক্তির সহায়তায় মৃতদেহ শনাক্ত-পূর্বক জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০২১ সালে ডিভাইসটি প্রবর্তনের পর থেকে অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির লাশের পরিচয় শনাক্ত করাসহ অসংখ্য ঘটনায় র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এছাড়া উক্ত সিস্টেম ব্যবহার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও দেশের বিভিন্ন থানাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্তে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্তকরণের পর এই ডিভাইসের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে যাচাইবাছাই করে পরবর্তী সময়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। ওআইভিএস ব্যবহারে প্রশাসনিক কাজেরও গতিশীলতা বেড়েছে।

 

আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে সমগ্র দেশের নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ থেকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া স্থাপন করা হয়েছে ৩০টির বেশি অস্থায়ী ক্যাম্প। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র?্যাব ফোর্সেস পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতা প্রতিরোধে দেশব্যাপী সর্বমোট সাত শতাধিক টহল দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে।

 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে র্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থেকে দায়িত্ব পালন করবে এবং টহলসমূহ ওআইভিএসের ডিভাইসটি ব্যবহার করবে, যা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা এবং ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাঘুরি না করার জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের পরিচয় শনাক্ত করতে র্যাবের মোবাইল টহল কর্তৃক এই ডিভাইস ব্যবহূত হবে। এছাড়া এই ডিভাইসের মাধ্যমে এক এলাকার ভোটার অন্য এলাকায় প্রবেশ করে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে কি না, তা শনাক্ত করে তাত্ক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দীর্ঘদিন যাবত্ পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা অপরাধী যারা আত্মগোপনে রয়েছে, তারা নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনের আগের দিন ও পরের দিন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এরূপ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওআইভিএস ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের আগের অপরাধের তথ্য সংগ্রহ করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করবে, তত্ক্ষণাত্ তাদের পরিচয় নিশ্চিত করাসহ ভোটকেন্দ্র ও তার আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের ডিভাইসটির মাধ্যমে খুব সহজেই শনাক্ত-পূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিত করতে এবারই প্রথম বারের মতো র্যাব কর্তৃক ওআইভিএস ব্যবহূত হচ্ছে।

লেখক : র‌্যাব এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Our Like Page