themeswala
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/swadhin/public_html/wp-includes/functions.php on line 6114নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসরায়েলের তীব্র হামলায় বিপর্যস্ত গাজা। ছোট্ট এ ভূখণ্ডের মানুষ এখন প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, কোথাও মিলছে না আশ্রয়। মানবিক সংকটময় এই সময়ে সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সেখানে বসবাস করা নারী ও শিশুরা।
গাজার গৃহহীন লাখ লাখ মানুষ গাদাগাদি করে অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে অবস্থান করছে। ইসরায়েল পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই এমনকি পান করার মত পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না সেখানকার মানুষ। স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের মত মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা প্রদানকারী পণ্য এখন আর গাজার নারীদের হাতের নাগালে নেই। এ পরিস্থিতিতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বিকল্প এক পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন ফিলিস্তিনি নারীরা। তারা ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে নানা ধরণের ওষুধ খাচ্ছেন। যে ওষুধ সেবনে অনিয়মিত রক্তপাত, মাথা ঘোরা ও বমি ভাব, স্বাভাবিক মাসিক চক্রে পরিবর্তন, মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা এবং মুড সুইংয়ের মত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
তাহলে কেনো গাজার নারীরা এসব ওষুধ সেবন করছেন যে বিষয়ে আল-জাজিরাকে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সের প্রসূতিবিদ্যা ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়ালিদ আবু হাতাব বলেন, এসব ওষুধ খেলে শরীরে প্রোজেসটেরন হরমন লেভেল বেড়ে যায়। ফলে মাসিক চক্র শুরু হতে বিলম্ব হয়।
“ইসরায়েলের বোমা বর্ষণের কারণে লাখ লাখ মানুষ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। একটি বাড়িতে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পালা করে শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। পানি না থাকায় কয়েক দিন পর পর হয়তো তারা গোসলের সুযোগ পান। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এখন তাদের কাছে বিলাসিতার পর্যায়ে চলে গেছে।
নেই পানি-শৌচাগার, ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব আটকে রাখছেন গাজার নারীরা
“সেইসঙ্গে যে দু একটা ওষুধের দোকান এখনো খোলা আছে সেখানে পর্যাপ্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন বা ট্যাম্পনের সরবরাহ নেই। ইসরায়েল যেহেতু প্রধান প্রধান সড়কে বোমা বর্ষণ বেশি করছে। তাই মেডিকেল সরঞ্জাম গুদাম থেকে দোকানে দোকানে সরবরাহ করাও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই নারীরা ঋতুস্রাব বন্ধ রাখতে ওষুধ সেবনের মত বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন।”
একই কথা বলেছেন গাজা সিটির তেল আ-হাওয়া থেকে দুই সপ্তাহ আগে পালিয়ে দেইর আল-বালাহ শরণার্থী ক্যাম্পে এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ৪০ বছরের সালমা খালেদ।
তিনি বলেন, “যুদ্ধের এই সময়ে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলো পার করছি। আমার এ মাসে দুইবার মাসিক হয়েছে। যেটা আমার জন্য খুবই অস্বাভাবিক। রক্তপাতও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল।
“দোকানে স্যানিটারি প্যাড নেই, অনেকে মিলে একটি শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। তাই আমি আমার মেয়েকে দোকানে পাঠিয়ে মাসিক বিলম্বিত করার ওষুধ কিনে এনেছি। হয়তো এই যুদ্ধ শীঘ্রই শেষ হবে। আমাকে একবারের বেশি এই ওষুধ সেবন করতে হবে না। আমি শরীরে এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তায় আছি।”
গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসায়েলের হামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৯৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৮ জনই শিশু। আহত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। আর গৃহহীন হয়ে একটু আশ্রয়ের খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে সেখানকার লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।
ওই দিন ভোরে গাজা থেকে হামাস অতর্কিতে ইসরায়েলে বৃষ্টির মত রকেট বর্ষণ করার পর সীমান্ত বেড়া ভেঙ্গে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে রীতিমত হত্যাযজ্ঞ চালায়। সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করে ১৪শ’র বেশি জনকে। অপহরণ করে নিয়ে যায় আরো প্রায় ২৩০ জনকে।
নেই পানি-শৌচাগার, ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব আটকে রাখছেন গাজার নারীরা
ওই হামলার প্রতিশোধ নিয়ে হামাসকে নির্মূল করার অভিযানে নেমেছে ইসরায়েল। যার বলি হচ্ছে গাজার লাখ লাখ সাধারণ ফিলিস্তিনি। যারা দশকের পর দশক ধরে নিজেদের মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। যুদ্ধ এখন তাদের ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দিয়েছে।
পরিবার নিয়ে খান ইউনিসের পশ্চিমে জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন সামিরা আল-সাদি। মাত্র কয়েক মাস আগে তার ১৫ বছরের মেয়ের মাসিক শুরু হয়েছে। ৫৫ বছরের এই নারী বলেন, আমি যদি আমার মেয়ের জন্য আরেকটু বেশি কিছু করতে পারতাম।
বলেন, “মাত্র মাসিক শুরু হওয়ায় এখনো যে সব কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। তার উপর এখন গাদাগাদি করে এই আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে হচ্ছে। তার স্যানিটারি প্যাড এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখার জন্য পানি দরকার। অথচ, অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দুটো জিনিস এখন চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে না।”
মেয়ের জন্য মাসিক বিলম্বিত করার ওষুধ কিনবেন কিনা সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না সামিরা। তিনি এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং তার মেয়ের শরীরে ওই ওষুধের কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
নেই পানি-শৌচাগার, ওষুধ খেয়ে ঋতুস্রাব আটকে রাখছেন গাজার নারীরা
এ্ মা বলেন, “কেনো তাকে এসবের মধ্য দিতে যেতে হচ্ছে সেটাই এখনো সে বুঝতে পারছে না। আমি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার যা প্রয়োজন সেটা এখন আমার হাতে নেই।”
৩৫ বছরের রুবা সেইফও একটি আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। তিনি বলেন, “এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলে কিছু নেই। শৌচাগারে পানি নেই। পানির জন্য আমরা যখন তখন বাইরে যেতেও পারছি না। সারাক্ষণ আতঙ্কে থাকি, ঘুম হয় না, ঠান্ডা নিবারণে পর্যাপ্ত কম্বল নেই। এতকিছুর মধ্যে আমার জন্য মাসিকের সময় হওয়া পেট ব্যথা সহ্য করা কঠিন।”
চার সন্তানের মা রুবা তাই তার ভাইকে বলেছে দোকান থেকে মাসিক বিলম্বিত করার ওষুধ কিনে আনতে। অনেক খুঁজে সে ওষুধ পাওয়া গেছে।
রুবা বলেন, “এখানে স্কুলে আশ্রয় নেওয়া অন্যান্য নারীরা আমাকে এই ওষুধের কথা জিজ্ঞাসা করেছে। একজন আমাকে বলেছে, তিনি তার জীবনে সবেচেয়ে খারাপ মাসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। আমি এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানি। কিন্তু এই ওষুধ আমাদের চারপাশে ঘটতে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, মৃত্যু ও বিপর্যয় থেকে বেশি ক্ষতি করতে পারবে না।”
ফিরে যাই দেইর আল-বালাহ শরণার্থী ক্যাম্পে। যেখানে আশ্রয় নেওয়া সালমা বলেন, “যুদ্ধের মধ্যে প্রতিদিনই আমরা আমাদের পক্ষে যা কিছু সম্ভব তার সবই করতে বাধ্য হচ্ছি।
“আমাদের সমানে কখনোই কোনো কিছু বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না।”