বিশেষ প্রতিনিধি:
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জলবায়ু বাজেট এমনভাবে সংস্কার করা উচিত, যাতে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। আর জলবায়ু বাজেট সংস্কার পরিচালনার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘জলবায়ু বাজেটের পর্যালোচনা ও বাংলাদেশে পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান সেমিনারটি পরিচালনা করেন।
এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। এটার একটি প্রতিফলন আমরা আমাদের প্রতিটি নীতিতে দেখতে পাই। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে, জলবায়ুর পরিবর্তনকে কীভাবে মোকাবিলা করবো তার ওপর।
জলবায়ুর ক্ষতি যদি জিডিপির ৯ শতাংশ হয়, আর জিডিপির প্রবৃদ্ধি যদি ৮ শতাংশও হয়, তাহলে আমরা ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে চলে যাবো। এ বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ফাহমিদা খাতুন বলেন, জলবায়ু বাজেট সংস্কার করা উচিত, যা জাতীয় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়। সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা (পিএফএম) এজেন্ডাসহ জলবায়ু বাজেট সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু বাজেট সংস্কার পরিচালনার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় দায়িত্ব নেওয়া উচিত। পাশাপাশি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত। বেসরকারি খাত, বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংস্থাগুলোসহ বৃহত্তর স্টেক হোল্ডারদের এ সংস্কার কাছে যুক্ত হতে পারে।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির (এসএসএনপি) বরাদ্দ বাড়াতে হবে। জলবায়ু বাজেট প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে জলবায়ু বাজেটকে জাতীয় বাজেট প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও ভালোভাবে সংযুক্ত করা এবং জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিলের ব্যয়ের সামর্থ্য আরও বৃদ্ধিতে জনশক্তির সক্ষমতা অপরিহার্য।
চলতি বছরের জলবায়ুর বাজেট প্রসঙ্গ ফাহমিদা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) শক্তিশালী করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলতি বছরের বাজেটে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আকার ১ হাজার ৪৩৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার বেশি। যদিও ৮ম বার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২০-২৫ সালের মধ্যে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার কোটি টাকা থেকে পিছিয়ে আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ), গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি (জিইএফ) এবং দ্বিপাক্ষিক উৎসসহ আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে জলবায়ুর অর্থায়ন চায়। এই তহবিলগুলো জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রকল্প এবং প্রোগ্রামগুলোকে সহযোগিতা করার জন্য ব্যবহার করবে। সর্বাধিক পরিমাণ জলবায়ু তহবিলের অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও, ক্লাইমেট ভারনারেবিলিটি ফোরামভুক্ত (সিভিএফ) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তহবিলের অভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের সংকট দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রকল্পগুলি তৈরি করা উচিত। প্রজেক্ট ডিজাইনিংয়ের জন্যও সক্ষম উন্নয়ন প্রয়োজন। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেসরকারি খাতের জলবায়ু তহবিলের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের তহবিলের প্রবাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন রয়েছে।