বিশেষ প্রতিনিধি:
এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছে, যারা ব্যাংকের টাকাও খেয়ে ফেলছে, মানুষের টাকাও খেয়ে ফেলছে। কিন্তু তাদের কিছু হয় না বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।
রোববার (২২ অক্টোবর) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক সেমিনারে সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স আসে মূলত শ্রমিকদের কাছ থেকে। আমার উচ্চশিক্ষিত ব্যবসায়ী বন্ধুরা তো পাঠায় না, উল্টো দেশ থেকে টাকা নিয়ে যায়। একই অবস্থা আমার চামড়া সেক্টরে। মুসলিম দেশ হিসাবে কুরবানির সময় অনেক চামড়ার জোগান হয়, বিক্রি হয় না। বর্জ্য হয়ে যাচ্ছে। হবে কেমনে? মূল ব্যবসায়ীদের এখন অনেক টাকা, তারা তো দেশেই থাকে না। ব্যবসা অন্যের হাতে, তারা চামড়া কিনে না। ফড়িয়ারা এখন চামড়া নিতেও চায় না। ট্যানারিতে চামড়া পড়ে থাকে। তাদের কিছু হয়ও না, কারণ ফেডারেশন কিংবা মন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের খাতির। মানুষের টাকা খেয়ে ফেলছে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী আছে, যারা ব্যাংকের টাকাও খেয়ে ফেলছে, মানুষের টাকাও খেয়ে ফেলছে। আসলে অসততাই মূল সমস্যা।
তিনি বলেন, আমরা যেভাবে চলি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও এভাবে চলে না। আমার তিনটা গাড়ি, ড্রাইভার ও বাড়ি। এতো সুযোগ সুবিধা, তারপরও কেন আমরা চোর হবো। দুর্নীতি কেন করবো, কত লাগে? কেউ পাঁচতলায় থাকে, আবার কেউ গাছতলায় থাকে। একই তো মানুষ। যারা একটু শিক্ষা পেয়েছেন, তারা এখন বিদেশমুখী। সবকিছু বিদেশ নিয়ে যাচ্ছেন। ছেলে ও বউ নিয়ে যাচ্ছেন। দেশপ্রেম নেই।
মানসিকতার পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। দেশপ্রেম দরকার। আজ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা পাস করলেও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমি সুপারিশ করলেও অনেক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। আমাদের সম্পদ সীমিত, সেজন্য ব্যবহার সর্বোচ্চ করতে হবে। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতারও দরকার আছে। এটা সবার বুঝতে হবে। দেশটা আমাদেরও। আমাকে দেশের জন্য কিছু করে যেতে হবে। গবেষণায় জোর দিতে হবে। হাতে-কলমে শিখতে হবে। গ্লোবাল জায়গায় আমরা যেখানে আছি, সেটা ধরে রাখতে হবে। আমাদের অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারবে।
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের অধীনে ৬৬.২ ধারায় উন্নত দেশ থেকে অনুন্নত দেশে প্রযুক্তির হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা সেটা দেখতে পারছি না। সেখানে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নত দেশের প্রযুক্তি এত মূল্যবান অনুন্নত দেশের পক্ষে ওই খরচ বহন করা সম্ভব হয় না। এ কারণে ওই ধরনের প্রযুক্তি আনতে প্রাইভেট সেক্টর ও সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। ওটা করতে পারলে আমাদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারি। সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।