বিশেষ প্রতিনিধি:
ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণে এখন যথাযথ নিয়মাচার অনুসরণ করা হয় না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, ঋণ পেতে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হলে সরেজমিনে যাচাই করা হতো।
ঋণ দেওয়ার পর সেটা খেলাপি হলে এতে জড়িত কর্মকর্তাকেও ব্যবস্থার আওতায় আসতে হতো।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সামনে কী আছে’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তৃতাকালে এম এ মান্নান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন ঋণ বিতরণে যথাযথ নিয়মাচার অনুসরণ করা হয় না। ঋণ দিতে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়া হলে সরেজমিনে যাচাই করা হতো।ঋণ দেওয়ার পর সেই ঋণ ফেইল করলে ওই ঋণের সঙ্গে কর্মকর্তা যুক্ত থাকলে তাকে শাস্তি পেতে হতো। এখন শাস্তি পেতে হয় না।ঋণখেলাপি হওয়ার পেছনে এটিও একটি কারণ। আর্থিক খাত নিয়ে এখন আলোচনায় সরকারকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার দিকে ইঙ্গিত করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, তথ্য প্রবাহে বাধার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অবাধ তথ্যপ্রবাহে বিশ্বাসী। আমরা রাজনীতিকরা জনগণের মধ্যেই থাকি। জনগণের কথা শোনার জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়টি কয়েক বছর আগে থেকেই বলা হচ্ছিল। ইদানীং বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, আবার স্থগিতও হয়ে গেছে। ব্যাংক একীভূত করার কাজ শুরু হওয়ার আগে বেশি করে স্টাডি করা হয়নি যে—কী হতে পারে। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে বলছেন, এক বছরের মধ্যে তারা ব্যাংক একীভূত করে ফেলবেন। কিন্তু এটা সম্ভব নয়।
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আইএমএফের জুনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে আমরা বেশি মাতামাতি করি। মনে করি যেন পশ্চিম থেকে ত্রাতারা এসেছে (ঢাকায়)। গণমাধ্যম তাদের পেছনে দৌঁড়ায়। আপনারা যা বানাচ্ছেন তারা তা নয়। তারা রুটিন মেনে আসে।
পোশাকখাতে প্রণোদনা কমানো নিয়ে প্রশ্ন
সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আজকে যে বাণিজ্য দেখছি, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো না থাকলে তা হতো না। আজকে যে খেলাপি ঋণ দেখছি সেটা ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদী আমানত, দীর্ঘমেয়াদী ঋণ বিতরণ নীতির কারণে নয়, অন্য কারণ। খেলাপি ঋণ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, এটা হবে। আর্থিক খাতে শক্ত নিয়ন্ত্রণ আছে, এমন সব দেশেও হয়েছে। আমরা এখন যা বলছি তা ১০ বছর ধরে বলছি। আজ কেন হঠাৎ করে ১০ ব্যাংকের নাম দিয়ে বলা হলো এগুলো খারাপ ব্যাংক? আমার অভিযোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে, কেন বাংলাদেশ ব্যাংক এটা বললো।
জাতীয় পার্টির এ রাজনীতিক বলেন, তৈরি পোশাকশিল্প দেশের একটি মাত্র খাত যারা বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে। আর এই খাতকে ধ্বংস করার জন্য তৈরি পোশাকশিল্প থেকে প্রণোদনা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলো। বলা হলো, ২০২৬ সালে প্রণোদনা তুলে নেওয়া হবে, সে লক্ষ্য থেকেই ধীরে ধীরে প্রণোদনা কমানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তৈরি পোশাকশিল্পকে ধ্বংস করার জন্য এটা করেছিল।
সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।