বিশেষ প্রতিনিধি:
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগ করার আহবান জানিয়েছেন। জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি এমপি।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগের উত্তমস্থলে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে কেউ কখনো ক্ষতিগ্রস্ত বা হতাশ হননি।
এসময়, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে যে সমস্ত বিদেশী প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছেন তাদেরকে তাদের সহযোগীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের ইতিবাচক পরিবেশ সম্পর্কে অবহিত করারও আহবান জানান।
আজ রাজধানীর গুলশানে রেনেসাঁ হোটেলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশে পরিচালিত ইউরোপীয়ান কোম্পানীগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ অনেক প্রকল্প মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কিছু বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের উত্তম জায়গায় পরিণত হয়েছে।
ইউরোপ ও বাংলাদেশ উভয়ের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনাকে একত্রে উন্মোচন করতে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন আমাদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে।
টিপু মুনশি আরো বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে যে সকল বাধা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সরকারের সাথে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ উল্লেখ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ দেখে বিনিয়োগ করতে বলেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হবে। এরপর স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। কাজেই নিশ্চিন্তে বসে থাকার কোনো উপায় নেই। আসন্ন পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি বলেন, রানা প্লাজার ঘটানার পর পরিবর্তনের ফলে আমাদের তৈরি পোষাকখাতে নতুন সম্ভাবনার তৈরি করেছে যেখানে ইইউ বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। ইউরোপ এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পূর্ণ সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করে আমাদের বাণিজ্য বাধা, অবকাঠামো উন্নয়ন, গুণমানের মান, শ্রম অধিকারসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সকল ধরনের সেবা নিশ্চিতকরতে বিডা বদ্ধপরিকর এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরে বিডার ‘ওএসএস’ প্ল্যাটফর্ম হতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সকল ধরনের সেবা স্বল্প সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা হবে।
তিনি জানান, আমাদের স্থানীয় বাজারের পরিমাণও বেশ বড়, যেখানে ইইউ কোম্পানীসমূহ বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পেতে বিডা সহযোগিতা করবে বলে তিনি অভহিত করেন।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মোঃ সামীর সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম সহযোগী হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যেখানে ২০২৩ অর্থবছরে আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৪৮ শতাংশের গন্তব্য হলো ইইউভুক্ত দেশসমূহ, যার পরিমাণ ২৫.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি জানান, ইইউ-এর বেশকিছু কোম্পানী বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৩.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে, যা আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পখাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ আনায়ন, সাপ্লাইচেইন শক্তিশালীকরণ সহ সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।