বিশেষ প্রতিনিধি:
অর্থনৈতিক করিডরে বাংলাদেশের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে সাত কোটি ১৮ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া ২০৪০ সালের মধ্যে চার কোটি ৬২ লাখ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এক কোটি ২৭ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি এই সুবিধা কাজে লাগানো গেলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ২৮৬ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য সুবিধা বাড়বে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ‘বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট হাইলাইটস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এসব তথ্য জানিয়েছে।
রাজধানীর শেরেবাংলানগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুন চ্যাং হোং। আলোচক ছিলেন এডিবির ডিরেক্টর সব্যসাচী মিত্র, প্রান আরএফএলের ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী এবং পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ। এতে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি করিডর সুবিধা ব্যবহার করা না যায় তা হলে ২০৫০ সালে কর্মসংস্থান হবে তিন কোটি ১১ লাখ।
আর এই সুবিধা ব্যবহার করা গেলে হবে সাত কোটি ১৮ লাখ কমংস্থান। এ ছাড়া ২০২৫ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে হবে এক কোটি ৩৪ লাখ, ব্যবহার করা গেলে এক কোটি ৫৭ লাখ। ২০৩০ সালে সুবিধা ব্যবহার করা না গেলে এক কোটি ৭০ লাখ, আর ব্যবহার করা গেলে হবে দুই কোটি ৩৪ লাখ কর্মসংস্থান।
২০৩৫ সালে সুবিধা কাজে না লাগানো গেলে দুই কোটি ১০ লাখ, সুবিধা কাজে লাগালে হবে তিন কোটি ৪৭ লাখ কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া ২০৪০ সালে কর্মস্থান হবে দুই কোটি ৪৮ লাখ।
তবে করিডর সুবিধা কাজে লাগানো গেলে হবে চার কোটি ৬২ লাখ কর্মসংস্থান।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অর্থনৈতিক করিডরের তিনটি পরিপূরক উপাদান রয়েছে—একটি বাণিজ্য ও পরিবহন করিডর উৎপাদন ক্লাস্টার, যা অভ্যন্তরীণ বাজারে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উভয়ই ব্যবহারের জন্য পণ্য উৎপাদন করে। এ ছাড়া শহুরে কেন্দ্রগুলো উৎপাদনকেন্দ্র থেকে পণ্যগুলোর প্রধান বাজার হিসেবে কাজ করে এবং আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যের জন্য তারা শ্রম প্রযুক্তি, সহায়তা পরিষেবা, জ্ঞান এবং উদ্ভাবনের উৎস হিসেবেও কাজ করে।
এই তিনটি উপাদান একটি সাধারণ উন্নয়ন ব্লু প্রিন্টে যুক্ত করা হয়, যা উপযুক্ত নীতি সমর্থন এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব। অর্থনৈতিক করিডর উন্নয়নের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হলো স্বল্পোন্নত অঞ্চলের একীকরণের মাধ্যমে সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রধান পিছিয়ে থাকা অঞ্চল। তাই বাংলাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থজুড়ে অভিন্ন, সামগ্রিক এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডরকে (বিইসি) দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল (খুলনা বিভাগ) থেকে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল (সিলেট) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছি। ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ করছি। ঢাকার চারপাশের উন্নয়ন করছি। ঢাকাকে বাইপাস করে সড়কের কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু সেতু ও পদ্মা সেতু বড় করিডর। এটা আমরা করতে পেরেছি।
তিনি আরও, সাতক্ষীরা থেকে এখন ঢাকায় আসতে নৌকায় উঠতে হয় না। সরকার ব্যবসাবান্ধব। সরকার ব্যবসা আরও সহজ করছে। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা ফ্লাইওভার চার হাজার কোটি টাকায় নির্মাণ করছি। এর মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়বে।
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নানা কাজে পাশের বাড়ি (ভারত) যেতেই হবে। এটা করলে লাভ হবে। ভুটান-ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটি (সংযোগ) করছি। এটা আমাদের প্রয়োজনে করছি, আামাদের বন্ধু দরকার। আমাদের প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা।
দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পাশে থাকতে হবে জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। তাহলে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ ভালো থাকবে। শেখ হাসিনা কাজ করছেন, তাকে আরও সুযোগ দিতে হবে। শেখ হাসিনাকে যতে বেশি সুযোগ দেবো দেশ তত বেশি এগিয়ে যাবে।
এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজার রহমান ও বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনের (বেজা) চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং।